মশা নিয়ে জনগণের ওপর রুল জারি করে দেই : হাইকোর্ট
আপনারা (সিটি কর্পোরেশন) যদি না পারেন তাহলে একটা আবেদন নিয়ে আসেন, সচেতন হওয়ার জন্য জনগণের ওপর রুল জারি করে দেই। আপনাদের (সিটি কর্পোরেশন) তো কাজ নাই, আগে তো কিছুই করেননি।
মশার কামড়ে চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মানুষ মারা যাওয়ার বিষয়ে জারি করা রুলের শুনানিতে সোমবার (২২ জুলাই) হাইকোর্টের বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়াদীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এসব কথা বলেন।
আদালতে আজ দুই সিটি কর্পোরেশনের প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সায়েরা ফাইরুজ। ঢাকা মহানগরীতে মশাবাহী রোগের বিস্তার রোধে মশা নির্মূলে দুই সিটি কর্পোরেশনের পদক্ষেপে অসন্তোষ প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। পরে মশা সম্পর্কে জানতে দুই সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকেও তলব করেন হাইকোর্ট। আগামী বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সকাল ১১টায় তাদেরকে আদালতে হাজির হতে বলা হয়।
আদালতের আদেশ সত্ত্বেও এডিস মশা নিধন ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় দুই সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে হাইকোর্ট বলেন, শুধু বাংলাদেশেই মশা মারতে হাইকোর্টে আসতে হয়। আদালতের আদেশ দিতে হয়। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে মশা মারতে আদালতের আদেশ দিতে হয় না।
আদালত বলেন, এডিস মশা নির্মূলে দুই সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে যে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট নই। মশা নিধনে যদি কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হতো তাহলে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে কেন? প্রতিবেদনে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া আর তো কিছু দেখতে পাচ্ছি না। সিটি কর্পোরেশনে যারা আছেন তাদেরকে আগে সচেতন হতে হবে। এরপর জনগণকে সচেতন হতে বলুন। সেটা না করে প্রতিবেদনে ‘বোগাস’ কথাবার্তা তুলে ধরছেন। আমরা চাই সমন্বিতভাবে মশা নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ নিন। যেন কোনো মানুষকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে না হয়।
শুনানিতে আদালত আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে হাইকোর্ট মশা মারার জন্য রুল দেয় না। এটা আমাদের দিতে হয়। আজও খবরে এসেছে মারা গেছে। অথচ যখন হাইকোর্টের রুল জারি করা হয়েছিল, সেদিন তো ৬-৭ জন মারা গেছিল। মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে, মানে (আপনারা) কিছু করছেন না। প্রতিবেদনে যা'ই লেখেন না কেন, কনসিকোয়েন্স (পরিণতি) তো হাসপাতাল। একটি লোককে তো জোর করে হাসপাতালে পাঠাতে পারবেন না, পারবেন কী? সাংবাদিকেরা কি মিথ্যা লেখে?
সিটি কর্পোরেশনের চিফ হেলথ অফিসারকে (প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা) বৃহস্পতিবার তলব করা হয়েছে। কেন তাদের তলব করা হয়েছে জানতে চাইলে সায়েরা ফাইরুজ বলেন, যে দুটি প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে সেখানে কী কী কার্যক্রম নেওয়া হয়েছিল সে সম্পর্কে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা নেই বলে মনে করেছে আদালত।
তিনি আরও বলেন, যদিও আমরা দেখিয়েছি যে, সিটি কর্পোরেশন চেষ্টা করছে মশা নিধন করতে। জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হয়েছে। কিন্তু মহামান্য আদালত বলছেন, আরও স্টেপ নেওয়ার দরকার ছিল। এ সম্পর্কে জানতেই বিশেষ করে এডিস মশা নির্মূলে সিটি কর্পোরেশন কী করছে তা জানতেই দুই কর্মকর্তাকে তলব করা হয়েছে বলে মনে করছি।
এফএইচ/আরএস/এমএস