কিশোর গ্যাং ‘এফএইচবি’র তিন সদস্য রিমান্ডে, কারাগারে ১১
রাজধানীর উত্তরা থেকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার ‘ফার্স্ট হিটলার বস’ (এফএইচবি) নামের কিশোর গ্যাংয়ের তিন সদস্যের বিরুদ্ধে দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গ্রুপের অপর ১১ সদস্যকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সোমবার তিনজনকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় অস্ত্র আইনে করা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাদের বিরুদ্ধে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা। অপরদিকে ১১ জনকে মাদক মামলায় কারাগারে আটক রাখার আবেদন করা হয়।
আরও পড়ুন >> বাড্ডায় নারীকে পিটিয়ে হত্যা : তিনজন চারদিনের রিমান্ডে
শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম শাহিনূর রহমান তিন আসামির বিরুদ্ধে দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অপরদিকে ঢাকা মহানগর হাকিম শহিদুল ইসলাম ১১ জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
রিমান্ডে যাওয়া ‘ফার্স্ট হিটলার বস’ গ্রুপের তিন সদস্য হলেন- বিশু চন্দ্র শীল, নাঈম মিয়া ও আল আমিন হোসেন। কারাগারে যাওয়া ১১ জন হলেন- ইয়াসিন আরাফাত, আসিফ মাহমুদ, ফরহাদ হোসেন, বিজয়, শাওন হোসেন সিফাত, ইমামুল হাসান মুন্না, তানভীর হাওলাদার, আকাশ মিয়া, মেরাজুল ইসলাম জনি, হযরত আলী ও রাজিব।
গত শনিবার (২০ জুলাই) মধ্যরাতে রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানাধীন রাজউক অফিসের সামনে থেকে তাদের আটক করে র্যাব-১। তারা হলেন- বিশু চন্দ্র শীল (২০), নাঈম মিয়া (১৮), ইয়াসিন আরাফাত (১৮), আসিফ মাহমুদ (২০), ফরহাদ হোসেন (২১), আল আমিন হোসেন (১৯), বিজয় (১৯), শাওন হোসেন সিফাত (২১), ইমামুল হাসান মুন্না (১৯), তানভীর হাওলাদার (১৮), আকাশ মিয়া (১৮), মেরাজুল ইসলাম জনি (২০), হযরত আলী (১৮) ও রাজিব (১৮)। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি এসবিবিএল অস্ত্র ও দুটি ধারালো ছোরা উদ্ধার করা হয়।
আরও পড়ুন >> আনন্দময় শৈশব ‘ভয়ঙ্কর’ করছে তারা
র্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম জানান, রাজধানীর উত্তরা, আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গী, উত্তরখান, দক্ষিণখান ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় কিছুদিন ধরে কয়েকটি কিশোর গ্যাং গ্রুপ দৌরাত্ম্য চালাচ্ছিল। তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার বিষয়টি র্যাব-১ এর নজরে আসে।
ওই গ্যাং গ্রুপ এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, স্কুল-কলেজে র্যাগিং, স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত, মাদক সেবন, ছিনতাই, উচ্চ শব্দে মোটরসাইকেল চালিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টিসহ ছিনতাই করে আসছিল। কেউ বাধা দিতে গেলে শারীরিক নির্যাতন করতো। তাদের গ্যাংভিত্তিক নিজস্ব লোগো রয়েছে, যা দেয়াল লিখন ও ফেসবুকে ব্যবহার করা হতো।
এক গ্রুপ অন্য গ্রুপকে হুমকি দিয়ে স্ট্যাটাস দেয়া এবং পরস্পরের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ ও আপত্তিকর মন্তব্য করে ফেসবুকে পোস্ট করে আসছিল। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এক গ্রুপ অন্য গ্রুপের সঙ্গে কোন্দলে লিপ্ত হতো। কিশোর গ্যাং গ্রুপের আন্তঃকোন্দল ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি হত্যাকাণ্ডে যার প্রমাণ পাওয়া যায়।
র্যাব-১ এর গোয়েন্দা অনুসন্ধানে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকারী এফএইচবি নামের ওই কিশোর গ্যাং গ্রুপের তথ্য পাওয়া যায়। গ্রুপটি এলাকায় ‘তুফান গ্রুপ’ নামেও পরিচিত। তারা উত্তরা এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার, মাদক সেবন, স্কুল-কলেজে বুলিং, র্যাগিং, ইভটিজিং, ছিনতাই, ফেসবুকে অশ্লীল ভিডিও শেয়ারসহ নানাবিধ অনৈতিক কাজ করে আসছিল।
আরও পড়ুন >> ভয়ঙ্কর কিশোর প্রজন্ম!
জিজ্ঞাসাবাদে আটকদের দেয়া তথ্য উল্লেখ করে সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, এফএইচবি গ্রুপের সদস্য বাড়ানোর কৌশল হিসেবে একটি ‘পিএচবি’ নামক ড্যান্স একাডেমি খোলে এবং কম খরচে ড্যান্স শিখানো হয়। যেখানে বিশু অন্যান্যদের ডান্স শেখায়।
বিশু ডান্স মাস্টার হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিলেও আদতে তার ড্যান্স বিষয়ে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান নেই। সে শুধু উঠতি বয়সের কিশোরদের তাদের গ্রুপে বেশি আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে ড্যান্স ক্লাবটি পরিচালনা করে আসছিল। তাদের গ্রুপে ছাত্র, দিনমজুর, বাস ড্রাইভার, অটো ড্রাইভার-হেল্পার থেকে শুরু করে সকল পেশার উঠতি বয়সের কিশোর আছে। আটকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
জেএ/এমএআর/এমএস