রাসেলকে টাকা দিতে গ্রীনলাইনকে এক সপ্তাহ সময় দিলেন হাইকোর্ট

গ্রীনলাইন পরিবহনের বাসের চাপায় পা হারানো প্রাইভেটকারচালক রাসেল সরকারকে প্রতি মাসে পাঁচ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে গ্রীনলাইনকে আরও এক সপ্তাহ সময় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে আগামী রোববার (২৮ জুলাই) এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।

এর আগে রাসেলের ক্ষতিপূরণে গ্রীনলাইনের পক্ষে শুনানিতে নতুন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক সময় আবেদন করেন। এরপর এক সপ্তাহ সময় মঞ্জুর করে রোববার হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আজ আদালতে রাসেলকে নিয়ে করা রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খোন্দকার শামসুল হক রেজা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। আর এ সময় রাসেল সরকার তার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে পা হারানো রাসেলকে পাঁচ লাখ টাকার প্রথম কিস্তি পরিশোধ করতে গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। মামলার নতুন আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছে গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষ। গত ১৬ জুলাই আইনজীবী অজি উল্ল্যাহ নিজেকে এ মামলা থেকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। ওইদিন আদালত মামলা শুনানির জন্য আজ (২১ জুলাই) দিন ধার্য করেন। আজ নির্ধারিত দিনে এই আদেশ দেন।

গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষের আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক আদালতকে বলেন, এ মামলায় আমি নতুন করে নিযুক্তি হয়েছি। মামলার প্রস্তুতির জন্য সময় প্রয়োজন। এ জন্য আদালতের অবকাশকালীন ছুটির পর এ মামলার শুনানির ব্যবস্থা করেন।

এ সময় আদালত বলেন, আপনারা মাসিক কিস্তিতে পাঁচ লাখ টাকা দেয়ার আদেশ বাস্তবায়ন করে আসেন। এ সময় আইনজীবী বলেন, তাহলে আমাদের এক সপ্তাহ সময় দেন। পরে আদালত এক সপ্তাহ দিয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন।

আদালতে রাসেলের পক্ষের আইনজীবী খোন্দকার শামসুল হক রেজা বলেন, ‘মাসে পাঁচ লাখ টাকা করে রাসেলকে দিতে হাইকোর্টের আদেশ পালন করেনি গ্রীনলাইন। তারা সর্বশেষ আদেশের পর আর কোনো টাকা দেয়নি। কোনো যোগাযোগ করেনি রাসেলের সঙ্গে।’

আইনজীবী খোন্দকার শামসুল হক রেজা সাংবাদিকদের বলেন, ‘গ্রীনলাইন হাইকোর্টের আদেশ পালন করেনি। এটা চরম ঔদ্ধত্য! তাদের যদি সমস্যা থাকত, তাহলে তারা সেটা আদালতকে বলতে পারত। কিন্তু তারা কিছুই বলেনি, আবার টাকাও দেয়নি।’

গত ২৫ জুন হাইকোর্ট রাসেল সরকারকে প্রতি মাসে পাঁচ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণের বাকি ৪৫ লাখ টাকা দিতে গ্রীনলাইনের প্রতি নির্দেশ দেন। প্রতি মাসের ৭ তারিখের মধ্যে রাসেলকে টাকা দিয়ে ১৫ তারিখের মধ্যে তা আদালতকে জানাতে বলা হয়।

এর আগে গত ১০ এপ্রিল রাসেল সরকারের হাতে ক্ষতিপূরণের পাঁচ লাখ টাকার চেক তুলে দেয় গ্রীনলাইন বাস কর্তৃপক্ষ। ওইদিন হাইকোর্ট কক্ষে বিচারকের সামনে গ্রীনলাইনের আইনজীবী মো. অজি উল্লাহ এই চেক রাসেলের হাতে তুলে দেন।

ওই সময় গ্রীনলাইনের আইনজীবী বাকি ৪৫ লাখ টাকা দিতে এক মাস সময় চাইলে হাইকোর্ট সময় মঞ্জুর করেন। সেই সঙ্গে রাসেলকে যথাযথ চিকিৎসা দিতে গ্রীনলাইন বাসের মালিককে নির্দেশ দেন আদালত। ওই আদেশ অনুযায়ী রাসেলের চিকিৎসাবাবদ এ পর্যন্ত সাড়ে তিন লাখ টাকা দেয়া হয়েছে বলে আদালতকে জানায় গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষ।

গত ১২ মার্চ হাইকোর্ট পা হারানো প্রাইভেটকারচালক রাসেলকে ৫০ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দেন। ২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল যাত্রাবাড়ীতে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে গ্রীনলাইন পরিবহনের বাসের চাপায় রাসেলের বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ওই যুবককে চাপা দেওয়ার পর গ্রিনলাইন পরিবহনের বাসটি ও তার চালককে পুলিশ আটক করে। পরে পুলিশ জানায়, মো. রাসেল (২৫) নামের ওই যুবক একটি প্রাইভেটকার চালাচ্ছিলেন। বাসটি তাঁর গাড়িকে ধাক্কা দিলে প্রতিবাদ জানাতে বাস থামাতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বাসচালক তাঁর ওপর দিয়েই বাস চালিয়ে দেন। এতে রাসেলের বাঁ পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর বাসিন্দা রাসেল রাজধানীর আদাবর এলাকার সুনিবিড় হাউজিংয়ে বসবাস করতেন এবং স্থানীয় একটি ‘রেন্ট-এ-কার’ প্রতিষ্ঠানের প্রাইভেটকার চালাতেন। রাসেলের পা হারানোর ঘটনার পর গত বছরের ১৪ মে ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী উম্মে কুলসুম। সে রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ক্ষতিপূরণের রুলসহ আদেশ দেন।

এফএইচ/বিএ/এমএস