ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

হাইকোর্টে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১১:২০ এএম, ১৬ জুন ২০১৯

বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরীক্ষায় অকৃতকার্য নিম্নমানের পণ্য বাজার থেকে সরিয়ে নেয়ার আদেশ বাস্তবায়ন না করায় তলবের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টে উপস্থিত হয়েছেন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহফুজুল হক। আজ সকাল ১০টার দিকে তিনি আদালতে উপস্থিত হন।

এর আগে গত ২৩ মে হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। ওই আদালতে এ বিষয়ে আজ শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। ওই দিন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে আজ নির্ধারিত দিনে (১৬ জুন) সশরীরে উপস্থিত হয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুর্টি অ্যার্টনি জেনারেল মো. মুখলেসুর রহমান জানান, গত ২৩ মে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী আজ রোববার হাইকোর্টে এসেছেন তিনি। এখন এর ওপর শুনানি করা হবে।

এর আগে বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় প্রমাণিত ৫২টি ভেজাল বা নিম্নমানের খাদ্যপণ্যের বিষয় নিয়ে গত ৯ মে হাইকোর্টে রিট করে কনসাস কনজ্যুমার সোসাইটি। সে রিটের শুনানি নিয়ে ১২ মে হাইকোর্ট বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় প্রমাণিত ৫২টি নিম্নমানের পণ্য বাজার থেকে অবিলম্বে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেন।

এ ছাড়া হাইকোর্ট তার আদেশে এসব খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন এবং মান উন্নীত না হওয়া পর্যন্ত এসব খাদ্যপণ্যের উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। আদালতের এই আদেশ বাস্তবায়ন করে ১০ দিনের মধ্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ও বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

তারই ধারাবাহিকতায় আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। তবে, এরা প্রতিবেদনে বাজার থেকে একটি পণ্যও সরানোর তথ্য না দিতে পারায় হাইকোর্ট নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে তলব আদেশ দেন এবং ১৬ জুন এ বিষয়ে শুনানির দিন ঠিক করেন।

ওইদিন তলব করার সঙ্গে সঙ্গে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুলও জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

সম্প্রতি ৪০৬টি খাদ্যপণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে বিএসটিআই। এর মধ্যে ৩১৩টি পণ্যের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ৩১৩টির মধ্যে ৫২ পণ্য মানহীন বলে প্রতিবেদন দেয় মাননিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা। বাকি ৯৩ পণ্যের পরীক্ষার ফলাফল প্রতিবেদন ১৬ তারিখের মধ্যে দিতে বিএসটিআইকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আজ সেটির প্রতিবেদনও আদালতে দাখিল করা হবে।

এদিকে, আদালতের আদেশ পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করে ৫২ পণ্যের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। আদালত তা আমলে নেয়ার মতো কোনো যুক্তি খুঁজে পাননি। এর আগে বিএসটিআই রিটেস্ট (ফের পরীক্ষা) শুরু করেছে। তবে, ৫২ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কেউ যদি তাদের পণ্য বাজারজাত করতে পুনরায় টেস্ট করাতে চায় তাহলে ১৩ জুনের মধ্যে তাদের পণ্য টেস্ট করে বিএসটিআই তাদের মান যাচাই করে বাজারজাত করার অনুমতি দিলে তারা বাজারজাত করতে পারবে। এর মধ্যে এসব পণ্যের বেশ কয়েকটি পুনরায় টেস্ট করার পর বাজারজাত করা শুরু হয়েছে।

গত ১২ মে এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট বাজার থেকে আইনানুসারে ৫২টি পণ্য সরিয়ে নিতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে, ওই আদেশ বাস্তবায়ন করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। আদেশ বাস্তবায়নের প্রতিবেদন দেয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। প্রতিবেদনে ৫২ পণ্যের একটির প্যাকেটও জব্দ করার বিষয়টি না থাকায় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করে তাকে তলব করেন।

তবে, সারাদেশে ৫২ পণ্য জব্দের প্রতিবেদন দেয়ায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে সাধুবাদ জানান আদালত। আদালতে ওই দিন রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম। ভোক্তা অধিকারের পক্ষে ছিলেন কামরুজ্জামান কচি।

প্রাণ এগ্রো লিমিটেডের পক্ষে ছিলেন এম কে রহমান; এসিআইয়ের পক্ষে ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ এবং সান চিপসের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম। আর বাঘাবাড়ী ঘিয়ের পক্ষে মোমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদী শুনানি করেন।

গত ৮ মে ভোক্তা অধিকার সংস্থা ‘কনসাস কনজুমার্স সোসাইটি’র (সিসিএস) নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান এ রিট করেন।

এর আগে তারা ওইসব পণ্য প্রত্যাহার ও জব্দ করার জন্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নিতে দুই সচিবসহ পাঁচজনের প্রতি আইনি নোটিশ পাঠান।

বিএসটিআই পরীক্ষায় ওইসব কোম্পানির ভেজাল ও নিম্নমাণের পণ্য ধরা পড়ে। এরপরও সরকারের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ না নেয়ায় গত ৬ মে ওই আইনি নোটিশ পাঠানো হয়।

বিএসটিআইয়ের বরাত দিয়ে ৩ ও ৪ মে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের তথ্য তুলে ধরে নোটিশে বলা হয়, বিএসটিআই সম্প্রতি ২৭ ধরনের ৪০৬টি খাদ্য পণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছে। এর মধ্যে ৩১৩টি পণ্যের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। যেখানে ৫২টি পণ্য নিম্নমানের ও ভেজাল। বিএসটিআই ওই ৫২টি প্রতিষ্ঠানকে শোকজ করেছে।

নোটিশে বলা হয়, ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারে। এমনকি কিডনি ও লিভারে জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের পণ্যসমূহ জব্দ না করে শুধুমাত্র কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে ওইসব নিম্নমানের পণ্য বাজারে বিক্রির সুযোগ করে দেয়া হয়েছে।

এফএইচ/এসআর/এমএস

আরও পড়ুন