কারও মানহানি ঘটিয়ে মত প্রকাশে স্বাধীনতা দেয়নি সংবিধান
বিচারাধীন মামলার সংবাদ পরিবেশনে সাংবাদিকদের দায়িত্ব রয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেছেন, খেয়াল রাখতে হবে মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে যেন মিডিয়া ট্রায়াল, বিচার প্রভাবিত ও আদালতের মর্যাদা ক্ষুণ্ন না হয়।
বুধবার (২৯ মে) রাজধানীর শিশু কল্যাণ পরিষদের গোলটেবিল মিলনায়তনে পাক্ষিক ওলামা কণ্ঠ আয়োজিত বিচারাধীন মামলার সংবাদ পরিবেশনের সতর্কতা শীর্ষক এক আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক বিচারপতি মানিক বলেন, ‘বিচারালয় হচ্ছে সকল মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল। সেটা সাংবাদিকদেরও, রাজনীতিবিদদেরও। এই আশ্রয়স্থলটি যেন কলঙ্কিত না হয় সেটি সাংবাদিকদের খেয়াল রাখতে হবে। এটা সংবিধানেরও কথা। সংবিধান যেমন মত প্রকাশের স্বাধীনতার গ্যারান্টি দিয়েছে, একইভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর কতগুলো বিধিনিষেধও দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সাংবাদিক হই বা অন্য যে’ই হই না কেন, এমন কোনো কথা আমাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে আসবে না যার ফলে অন্য আরেক ব্যক্তির মানহানি ঘটে। কারও মানহানি ঘটিয়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংবিধান আমাদের দেয়নি। মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে এমন কোনো কথা বলা যাবে না যার ফলে দেশে বিশৃঙ্খলা বা নৈরাজ্যের সৃষ্টি হতে পারে, ধর্মের ওপর আঘাত আসতে পারে বা ধর্মীয় হানাহানির সৃষ্টি হতে পারে।’
বিচারাধীন মামলার বিষয়ে সংবাদ পরিবেশন নিয়ে বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘সংবিধানই বলেছে, এমন কোনো কথা বলা যাবে না, যার ফলে আদালত অবমাননা ঘটতে পারে। সাংবাদিক বলি আর অন্য যে’ই বলি নিজেদের খেয়াল রাখতে হবে। এমন কিছু কথা বা এমন কিছু ঘটনা আমরা প্রচার-প্রকাশ করব না, যার ফলে আমাদের আদালতের মান ক্ষুণ্ণ হয়। আদালতের ওপর জনগণের যে আস্থা, সে আস্থাকে নিয়ে যেন কটাক্ষ করা না হয় বা অন্য কোনোভাবে আইনের শাসনের ওপর যেন বাধা না আসে। এটা সাংবাদিকদের বুদ্ধি-বিবেচনার মধ্যে এনেই চলতে হবে।’
সংবাদ প্রকাশের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর গত ২১ মে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি নিয়ে বিচারপতি মানিক বলেন, ‘পরবর্তী বিজ্ঞপ্তিতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছেন। সুতরাং আমার মনে হয়, এ নিয়ে আর মতবিরোধের সুযোগ নেই। সাংবাদিকদের দায়িত্ব রয়েছে বিচারাধীন মামলায় প্রতিদিন কী হচ্ছে না হচ্ছে সেই কথাগুলো জনগণের সামনে পেশ করার। এতে জনগণও যেমন উপকৃত হয়, তেমনি সাংবাদিকরাও নিষ্ঠার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন। সুতরাং এ ব্যাপারে আর কোনো দ্বন্দ্ব বা বিভেদ বা ধূম্রজাল সৃষ্টির কোনো সুযোগ নেই।’
বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ) সভাপতি কবীর চৌধুরী তন্ময় আলোচনা সভার প্রধান বক্তার বক্তব্যে বলেন, আমরা জানি এবং বিশ্বাস করি, আদালত কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নয় বরং প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিচার-বিশ্লেষণ করে মামলার রায় দিয়ে থাকেন। আর সংবাদকর্মী আদালত থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তা প্রচার-প্রকাশ করেন। এখানে সংবাদকর্মীর নিজেস্ব কোনও মতামত থাকে না।
তিনি আরও বলেন, কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ নিজেদের অনুকূলে মামলার রায় না পেয়ে আদালতকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নানা সময়ে বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে আদালতকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করে। যা মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারকাজসহ খালেদা জিয়ার মামলার রায় নিয়ে বিভিন্ন সভা-সেমিনারসহ টিভি টকশোতে দেখা যায়। এ জায়গায় আমাদের সতর্ক, সাবধান হওয়া উচিত বলে আমি মনে করছি।
পাক্ষিক ওলামা কণ্ঠের সম্পাদক মো. আখতার হোসাইন ফারুকীর সঞ্চালনায় এবং উপদেষ্টা মুফতী মাসুম বিল্লাহ নাফিয়ীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. মাহাবুবুর রহমান বক্তব্য রাখেন। এছাড়া অন্যান্যদের মাঝে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) সাবেক সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস আফ্রাদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) নির্বাহী পরিষদ সদস্য খায়রুজ্জামান কামাল, সিনিয়র সাংবাদিক শরিফুল ইসলাম বিলু, শেখ মামুনুর রশিদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এফএইচ/আরএস/পিআর