‘সরকার আদালত স্থানান্তর করতে পারে যেকোনো স্থানে’
নাইকো দুর্নীতি মামলার বিচারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আদালত স্থানান্তরের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার চেয়ে করা রিটের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, আইনের বিধান আছে- সরকার আদালত স্থানান্তর করতে পারে যেকোনো স্থানে।
মঙ্গলবার দুপুরে অ্যাটর্নি জেনারেলের নিজ কার্যালয়ে তিনি এ কথা বলেন।
মাহবুবে আলম বলেন, ‘খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা অভিযোগটি তুলছেন যে, কেরানীগঞ্জের আদালত ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে। এ যুক্তি এই মামলায় টিকবে না।’
‘তার কারণ হলো- এই মামলায় বিচার করছেন একজন বিশেষ জজ। আর একজন বিশেষ জজের এখতিয়ার সমগ্র ঢাকা বিভাগজুড়ে। তাছাড়া আইনের বিধান আছে, সরকার যেকোনো জায়গায় আদালত স্থানান্তর করতে পারে।’
তিনি বলেন, কানাডিয়ান কোম্পানি নাইকোকে গ্যাসফিল্ড দেয়া হয়েছিল। এ বিষয়ে নানারকম দুর্নীতি হয়েছিল। তা নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বেশ কয়েকজনকে আসামি করে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর মামলা করে খালেদা জিয়া, মওদুদ আহমদ, খন্দকার মোশাররফ হোসেন সহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে। ২০০৮ সালের ৫ মে এই মামলায় চার্জশিট দাখিল করা হয় এবং চার্জ শুনানির জন্য একই বছরের ৮ জুন দিন নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এরপর আর চার্জ শুনানি সম্ভব হয়নি। তার কারণ হলো, বিভিন্ন সময়ে এ মামলার বিভিন্ন আসামি মামলাটির বিচারিক আদালতের বিভিন্ন আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে এসেছেন, আবার আপিল বিভাগে গিয়েছেন।
‘সর্বশেষে মামলাটি যখন আলিয়া মাদরাসা মাঠে শুরু হলো তখন খালেদা জিয়ার সমর্থকদের কারণে একটি বিশৃঙ্খলা শুরু হয়েছিল। তারা নানাভাবে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিল। তাই কারাভ্যন্তরে (পরাতন কেন্দ্রীয় কারাগার) একটি আদালত হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তাদের আইনজীবীরা বিভিন্ন সময়ে বলেছেন, এ জায়গাটি (পরাতন কেন্দ্রীয় কারাগার) অপ্রশস্ত এবং সেখানে বসার জায়গা হয় না, ইত্যাদি। সরকার গত ১২ মে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি ভবনকে আদালত হিসেবে ঘোষণা করেছেন, নাইকো দুর্নীতি মামলার বিচারের জন্য।’
‘যে ভবনে বিচার হবে সে ভবনের রুমটির পরিমাপ প্রায় ২ হাজার স্কয়ারফিট। এখানে প্রায় ২০ সারি বেঞ্চ বসানো সম্ভব। সেখানে পর্যাপ্ত আলো ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা আছে। এ মামলায় গত ১৯ মে তারা সময় নিয়েছেন। এরপর এসে হাইকোর্টে মামলা করেছেন যে, আদালত স্থানান্তর করা অবৈধ,’- বলেন তিনি।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘রিটটির শুনানিতে বলেছি, এটা আর কিছু না, এই বিচারকে (নাইকো দুর্নীতি মামলা) বিলম্বিত করতে তাদের এই প্রচেষ্টা। ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামি ফারুক রহমানও এরকম নাজিমুদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনের একটি ভবনকে করা আদালতের বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। সে মামলায় আপিল বিভাগ স্পষ্টভাবে রায় দিয়েছিলেন যে, সরকার এটা (আদালত স্থানান্তর) পারে।
রাষ্ট্রের প্রধান এ আইন কর্মকর্তা আরও বলেন, এমনটা (কারাগারে আদালত স্থাপন) এ দেশে নতুন নয়। এর আগেও বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার, হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের বিচার, বিডিআর বিদ্রোহ মামলার বিচার করতেও আদালত (কারাগারে) স্থাপন করা হয়েছিল। সর্বশেষ খালেদা জিয়ার বিচারের জন্য আদালত স্থাপন করা হয়েছে। এর আগে পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে যখন আদালত স্থাপন করা হয়েছিল তখন তারা (খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা) এ নিয়ে কোনো আপত্তি করেননি কিন্তু এখন কেরানীগঞ্জে আদালত স্থানান্তর করা নিয়ে তারা যে আপত্তি করছেন, তার কোনো যুক্তিকতা নেই।
এফএইচ/জেডএ/এমএস