পলাশকে কারাগারে পরিকল্পিতভাবে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ
পঞ্চগড় জেলা কারাগারে (কারা হেফাজতে) থাকা অবস্থায় বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের তালিকাভুক্ত আইনজীবী পলাশ কুমার রায়কে পরিকল্পিতভাবে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন এ অভিযোগ করেন। একই সঙ্গে তিনি ওই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান।
রোববার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন খোকন।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তির অভিযোগে স্থানীয় রাজিব রানা নামের এক যুবক আইনজীবী পলাশের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করেন। ওই দিনই আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
গত ২৬ এপ্রিল বিকেলে অপর এক মামলায় তাকে ঢাকায় পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু সকালে হঠাৎ হাসপাতালের বাইরে থাকা একটি টয়লেট থেকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় দৌঁড়ে বের হন পলাশ। এ সময় কারারক্ষীরা তাকে উদ্ধার করে আগুন নেভান এবং তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আগুনে তার শরীরের ৪৭ শতাংশ পুড়ে যায়। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরদিনই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। গত ৩০ এপ্রিল দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পলাশের মৃত্যু হয়।
পলাশের মৃত্যু প্রসঙ্গে মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘মা মিরা রানি রায় তার ছেলে আইনজীবী পলাশ কুমার রায়ের অগ্নিদগ্ধের ঘটনায় কারা কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছেন। এছাড়া অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর খবর না দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। ওই ঘটনায় পলাশের মা সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন। মৃত্যুর আগে পলাশ তার মায়ের কাছে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ করে গেছেন।’
আরও পড়ুন > পঞ্চগড়ে কারাগারে অগ্নিদগ্ধ পলাশের মৃত্যু
পলাশ হত্যার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি এবং ওই ঘটনায় কারা কর্তৃপক্ষের কোনো যোগসাজশ আছে কিনা- তা খতিয়ে দেখতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক।
গত ২৫ মার্চ দুপুরে স্থানীয় কোহিনুর কেমিক্যাল কোম্পানি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে পরিবারের লোকজন নিয়ে অনশন করেন পলাশ কুমার রায়। পরে সেখান থেকে উঠে তারা জেলা শহরের শের-ই-বাংলা পার্ক সংলগ্ন মহাসড়কে এসে মানববন্ধন শুরু করেন।
একপর্যায়ে রাস্তা বন্ধ করে হ্যান্ডমাইক দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে কটূক্তি করেন পলাশ। এ সময় প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনী সম্পর্কেও অশালীন বক্তব্য দেন তিনি। ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয়রা তাকে সদর থানা পুলিশের হাতে তুলে দেন। ওইদিন বিকেলে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে স্থানীয় রাজিব রানা নামের এক যুবক পলাশের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করেন। ওই দিনই আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
২৮ এপ্রিল অন্য একটি মামলায় ঢাকার একটি আদালতে হাজিরের তারিখ থাকায় ২৬ এপ্রিল বিকেলে পলাশকে ঢাকায় পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু সকালে হঠাৎ হাসপাতালের বাইরে থাকা একটি টয়লেট থেকে তিনি অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় দৌড়ে বের হন। এ সময় কারারক্ষীরা তাকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পাঠান। পরবর্তীতে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। ৩০ এপ্রিল দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
পলাশের মৃত্যু প্রসঙ্গে মা মীরা রাণী রায় অভিযোগ করেন, পলাশ একসময় কোহিনুর কেমিক্যাল কোম্পানির আইন কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করত। চাকরির একপর্যায়ে কোম্পানির সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব বাধে। তার বিরুদ্ধে কোহিনুর কেমিক্যাল কোম্পানি ৩০ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলা করে। মামলার পর থেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে পলাশ।
‘তার অগিদগ্ধ হওয়ার ঘটনায় অবশ্যই কারা কর্তৃপক্ষ দায়ী। আশা করি, এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত শেষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’ বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
পঞ্চগড় কারাগারের জেলার মোশফিকুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, পলাশ কারাগারে ভালোই ছিলেন। প্রথমে তিনি নিজেকে সিরোসিস রোগী পরিচয় দিয়ে সাধারণ বন্দিদের সঙ্গে থাকতে আপত্তি জানান। পরে সহানুভূতি দেখিয়ে তাকে কারাগারের অভ্যন্তরে হাসপাতালে রাখা হয়।
তিনি বলেন, হাজতি হিসেবে একটু কম কথা বলতেন তিনি (পলাশ)। নববর্ষের অনুষ্ঠানে চমৎকার কবিতাও পাঠ করেন। তবে ঢাকার একটি মামলা নিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। ২৮ এপ্রিল সেই মামলায় ঢাকার এক আদালতে তাকে হাজির করার তারিখ ছিল। ২৬ এপ্রিল বিকেলে তাকে ঢাকা পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু সকালে তাকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
এফএইচ/এমএসএইচ/এমএআর/জেআইএম