রাজীবের মৃত্যু : কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের পরবর্তী শুনানি ৩০ এপ্রিল
রাজধানীতে বাসচাপায় হাত হারানোর পর নিহত শিক্ষার্থী রাজিব হোসেনের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে এক কোটি টাকা প্রশ্নে জারি করা রুলের ওপর হাইকোর্টে চূড়ান্ত শুনানি শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার শুনানি শেষে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৩০ এপ্রিল দিন ধার্য করেন আদালত। শুনানি শেষে হাইকোর্টের বিচারপতি জেবি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এ দিন ধার্য করেন।
রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোসাদ্দেক বিল্লাহ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। বিআরটিএর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট রাফিউল ইসলাম, বিআরটিসির পক্ষে অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান। এ সময় রাজিবের খালাসহ কয়েকজন নিকটাত্মীয় উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সড়কে শৃঙ্খলা আনার জন্য সরকারের গঠিত কমিটির করা ১১১ দফা সুপারিশের খসড়া কপি আদালতে দাখিল করে বিআরটিএ (রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি)। এর বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরতে বলেন আদালত।
আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, রাজিবের মৃত্যুর জন্য স্বজন পরিবহন কোনো ভাবেই দায় এড়াতে পারে না। তদন্ত প্রতিবেদনে সেটি উল্লেখ করা হয়েছে।
এ পর্যায়ে স্বজন পরিবহনের আইনজীবী বলেন, স্বজন পরিবহন কর্তৃপক্ষের ৪০টি গাড়ির মধ্যে ১৩ জনের মালিকানা রয়েছে। আমার দোষ শুধু আমি স্বজন পরিবহন, এর বাইরে আমার আর কিছু নেই। এখানে গাড়ির মালিক রাজু। যিনি বাস ভাড়া নিয়েছেন, এ ঘটনার জন্য দায়ভার তার।
আইনজীবী বলেন, আমার দায়িত্ব শুধু ঠিকমত গাড়ি চলছে কি না সেটি দেখা। আদালত আইনজীবীকে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা কি শৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে না? রোড পারমিট দেয়ার অর্থ কী? যেহেতু রোড পারমিট দেয়া হয়েছে সেহেতু রাস্তার দুর্ঘটনার দায় দায়িত্বও নিতে হবে আপনাকে। এরপর আদালত শুনানি মুলতবি করেন।
একই সঙ্গে, এ সংক্রান্ত অন্যান্য মামলার রেফারেন্স এবং বিআরটিএ কর্তৃক আদালতে দেয়া ১১১ দফা সুপারিশের সঙ্গে সড়ক পরিবহন আইনের সামঞ্জস্য আছে কিনা, তা দেখার জন্য রিটকারী পক্ষের আইনজীবীকে বলা হয়।
২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল রাজীবের চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্ট বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট করেছিলেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। রিটের পর ওই বছরের ৮ এপ্রিল আদালত রাজীবের পরিবারকে কেন ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন।
আপিল বিভাগ একই বছরের ২২ মে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে দেন। একইসঙ্গে, হাইকোর্টকে কমিটি করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। রুল নিষ্পত্তির নির্দেশও দেন আপিল আদালত।
এরপর হাইকোর্ট গত বছর ৩০ মে এক আদেশে একটি কমিটি গঠন করে দেন। ওই কমিটির দেয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই বাসের চালকের (বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহন) বড় গাড়ি চালানোর লাইসেন্স ছিল না। তাদের হালকা যানবাহন চালানোর লাইসেন্স ছিল।
প্রতিবেদনে শমরিতা হাসপাতালকেও দায়ী করে বলা হয়েছে, তারা দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে পারেনি। চিকিৎসা দিলে হয় তো রাজিবের বিষয়টা অন্যরকম হতে পারতো। প্রতিবেদনে একটি সড়কে একটি কোম্পানির গাড়ি চালানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এতে দুই পরিবহনের মধ্যে যাত্রী ওঠানোর প্রতিযোগিতা এড়ানো যাবে। এটা হলে দুর্ঘটনা অনেক কমে আসবে। ওই প্রতিবেদনে মোট ১৮ দফা সুপারিশ করা হয়।
এ প্রতিবেদন গত বছর ১৫ অক্টোবর আদালতে উপস্থাপনের পর আদালত রুলের ওপর শুনানির দিন ধার্য করেন ১৪ নভেম্বর। রুল শুনানির জন্য ব্যারিস্টার কাজল গত ৩ এপ্রিল আদালতে বিষয়টি উপস্থাপন করেন।
২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল বিআরটিসির একটি দোতলা বাসের পেছনের গেটে দাঁড়িয়ে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের স্নাতক (বাণিজ্য) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাজীব হোসেন (২১)। হাতটি বেরিয়ে ছিল সামান্য বাইরে। হঠাৎ করেই পেছন থেকে একটি বাস বিআরটিসির বাসটিকে ওভারটেক করার জন্য বাঁ দিকে গা ঘেঁষে পড়ে।
দুই বাসের প্রবল চাপে রাজীবের হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পথচারী তাকে দ্রুত পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু চিকিৎসকরা চেষ্টা করেও বিচ্ছিন্ন হাতটি রাজীবের শরীরে জুড়ে দিতে পারেননি।
শমরিতা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর রাজীবকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সাময়িক উন্নতির পর তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। একপর্যায়ে মস্তিষ্ক অকেজো হয়ে যায়। সেই থেকে আর জ্ঞান ফেরে না রাজীবের।
ঢামেকের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ১০ এপ্রিল ভোর পৌনে ৪টায় অজ্ঞান হয়ে পড়েন রাজীব। এরপর ওইদিন সকাল ৮টায় তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। একই বছরের ১৭ এপ্রিল তিনি মারা যান রাজীব।
এফএইচ/এমএসএইচ/বিএ