বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে আইনি পরামর্শ নিলেন রাজউক চেয়ারম্যান
আইন না মেনে গড়ে তোলা বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ১৬ তলা ভবন ভাঙা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। ভবন ভাঙার পরিকল্পনা নিয়ে মঙ্গলবার ব্যস্ত সময় পার করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।
এরপর এদিন সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্টের অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে যান রাজউক চেয়ারম্যান আবদুর রহমান। এ সময় তিনি ভবন ভাঙার বিষয়ে আইনি নানান দিক নিয়ে পরামর্শ নিয়েছেন।
মঙ্গলবার সারাদিন বিজিএমইএ ভবন থেকে মালামাল সরানো হয়েছে। সন্ধ্যার দিকে ভবনটি সিলগালা করা হয়। এখন দেখার পালা কবে ভাঙছে হাতিরঝিলের বিষফোঁড়া বলে খ্যাত এ ভবন।
সূত্র জানায়, হাতিরঝিলের ক্যান্সার খ্যাত এ শক্তিশালী বহুলত ভবনটি নিরাপদে ভাঙার জন্য আবেদন আহ্বান করবে রাজউক। এ লক্ষ্যে বুধবার দেশের সব সংবাদ মাধ্যমে টেন্ডারের দরপত্র আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।
২০১৭ সালে বিজিএমইএ ভবন অন্যত্র স্থানান্তরে কয়দিন সময় লাগবে, তা জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করতে বলেছিলেন আদালত। ওই দিনই এ বিষয়ে শুনানি করে আদেশের দিন ঠিক করা হয়। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২ এপ্রিল সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনে এক বছর ১০ দিন রাজধানীর বহুল আলোচিত এ ভবন ভাঙার বিষয়ে সময় বেঁধে দিয়ে আইনি প্রক্রিয়া শেষ করেছিলেন।
আজ মঙ্গলবার ভবন ভাঙা না ভাঙার বিষয়ে আবারও সুপ্রিম কোর্টের চেম্বারজজ আদালতে আবেদন করা হয়েছে বলে গুঞ্জন ওঠে। এমন খবরে মানবাধিকার সংগঠনের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ আপিল বিভাগের চেম্বারজজ আদালতে যান। কিন্তু বিজিএমইএ ভবন নিয়ে কোনো আবেদন করা হয়নি বলে জানান। এমন কোনো মামলাও আজ চেম্বারজজ আদালতের তালিকায় ছিল না বলে তিনি জাগো নিউজকে জানান।
মনজিল মোরসেদ বলেন, কে বা কারা বিজিএমইএ ভবন নিয়ে চেম্বার আদালতে গেছেন শোনে আমি আদালতে যাই। গিয়ে দেখি বিজিএমইএ ভবন নিয়ে কোনো মামলা চেম্বার আদালতে তালিকাভুক্ত হয়নি। আমরা আদালতে বসা ছিলাম, কেউ এ সংক্রান্ত বিষয় উপস্থাপনও করেনি।
তিনি জানান, যেহেতু ভবন ভাঙার বিষয়ে মুচলেকা (আন্ডার টিকিং) দিয়েছে। সেহেতু এখন আর আদালতে আসার সুযোগ থাকছে না। আজ থেকে ভবন ভাঙার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এখন আর আদালতে আসার কোনো সুযোগ নেই। তারপরও কেউ যদি আসেন তা হলে আদালত অবমাননার মামলা করব।
এদিকে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজের বিষয়ে আইনি পরামর্শ নিতে মঙ্গলবার সন্ধায় রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে যান রাজউক চেয়ারম্যান আবদুর রহমান।
পরে আবদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ভবন ভাঙার বিষয়সহ আরও বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ নেয়ার জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল স্যারের কাছে এসেছিলাম।
এখন তো ভবনের বিষয়ে আইনি সব প্রক্রিয়া শেষ উল্লেখ করে তিনি জানান, নিয়ম অনুযায়ী আমাদের যা করা দরকার তা করেছি। এখন
ভবন ভাঙার জন্য আগামীকাল বুধবার প্রতিষ্ঠানের দরপত্র চেয়ে টেন্ডারের জন্য দেশের সব পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।
২০১০ সালের ২ অক্টোবর রাজউকের অনুমোদন ছাড়া বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ বিষয় নিয়ে একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদনটি আদালতের দৃষ্টিতে আনেন সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল হাইকোর্টের রায়ে ওই ভবনটিকে ‘হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যান্সারের মতো’ উল্লেখ করে রায় প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেন। দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পায়।
এতে বলা হয়, ‘বেগুনবাড়ি খাল’ ও ‘হাতিরঝিল’ জলাভূমিতে অবস্থিত ‘বিজিএমইএ কমপ্লেক্স’ নামের ভবনটি নিজ খরচে অবিলম্বে ভাঙতে আবেদনকারীকে (বিজিএমইএ) নির্দেশ দেয়া যাচ্ছে। এতে ব্যর্থ হলে রায়ের কপি হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে রাজউককে ভবনটি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেয়া হলো। এ ক্ষেত্রে ভবন ভাঙার খরচ আবেদনকারীর (বিজিএমইএ) কাছ থেকে আদায় করবে তারা। এরপর ভবন সরানোর বিষয়ে দফায় দফায় সময় নিয়েছেন বিজিএমই কতৃপক্ষ।
রায়ে বলা হয়, ভবন নির্মাণের জন্য জলাধার আইন, ২০০০ এবং পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ অনুযায়ী পরিবেশগত ছাড়পত্র নিতে হয়। এখানে তা অনুপস্থিত।
১৯৯৮ সালের নভেম্বরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিএমইএ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০০৬ সালের অক্টোবরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ভবনটির উদ্বোধন করেন। রাজধানীর হাতিরঝিল প্রকল্পে হোটেল সোনারগাঁওয়ের পাশে বিজিএমইএ ভবনে মোট এলাকা বা স্পেস ২ লাখ ৬৬ হাজার বর্গফুট। বিজিএমইএ ব্যবহার করে চারটি তলা। বাকি জায়গা দুটি ব্যাংকসহ ৪০টির মতো প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হয়েছে।
এফএইচ/জেডএ/বিএ