মন্ত্রিসভার সাবেক সদস্যদের বাসা ছাড়ার নির্দেশনা চেয়ে রিট
মন্ত্রিসভার সাবেক সদস্য ও সচিবরা অবস্থান করে থাকা সরকারি বাসা বর্তমান মন্ত্রীদেরকে ছেড়ে দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে। রিটে নতুন করে মন্ত্রিসভায় যুক্ত হওয়াদের মধ্যে বরাদ্দপ্রাপ্তদের সরকারি বাসা বুঝিয়ে দিতেও নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবীর পল্লবসহ পাঁচ আইনজীবী এই রিট করেন। বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী পল্লব নিজে।
রিটের বিবাদীরা হলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ও সরকারি আবাসন পরিদফতরের পরিচালক।
এর আগে সোমবার (৮ এপ্রিল) ডাক ও রেজিস্ট্রিযোগে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির পল্লবসহ পাঁচ আইনজীবী সংশ্লিষ্টদের প্রতি নোটিশ পাঠিয়েছিলেন। নোটিশে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছিল।
নোটিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় হাইকোর্টে এই বিষয়ে আইনি প্রতিকার চেয়ে রিট করা হয়েছে বলে জানান ব্যারিস্টার পল্লব।
তিনি বলেন, ‘মন্ত্রিসভার সদস্যরা তাদের জন্য বরাদ্দ দেয়া বাসায় উঠতে না পারায় দেশের জনগণের এবং রাষ্ট্রীয় কাজের ক্ষতি হচ্ছে। মন্ত্রিসভার সাবেক সদস্যদের দখলে সরকারি বাসা- এমন সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। ওই সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিসভার সব সদস্যকে দ্রুত সরকারি বাসা বুঝিয়ে দিতে প্রথমে নোটিশ পাঠিয়েছিলাম। তবে তারপরও এ বিষয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় আজ রিট আবেদন করেছি।’
মন্ত্রিপরিষদের সদস্য এখন ৪৬ জন। অথচ তাদের বসবাসের জন্য সরকারি বাসা রয়েছে মাত্র ২৩টি। ফলে ৪৬ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপ-মন্ত্রীর মধ্যে ২৩ জনেরই কোনো আবাসন নেই। বাকি ২৩ জন মন্ত্রী সরকারি বাসা বরাদ্দ পেয়েছেন। কিন্তু বরাদ্দ করা বাসায় এখনও উঠতে পারেননি ১২ জন। কারণ গত মন্ত্রিপরিষদের মেয়াদ শেষ হলেও সরকারি বাসা ছাড়েননি অনেক সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী।
এ ছাড়া ওয়ান-ইলেভেন সরকারের আমলে একাধিক সচিব মন্ত্রীদের বাসা বরাদ্দ নিয়ে পর্যায়ক্রমে বসবাস করে চলেছেন। মন্ত্রীদের আবাসন সংকট হলেও তাদের বাসা বদল হয়নি। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচনী এলাকা থেকেই অফিস করছেন অনেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপ-মন্ত্রী।
সরকারি আবাসন পরিদফতর সূত্রে জানা যায়, বাসা স্বল্পতার কারণে আবেদন করে বাসা পাননি ছয় মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী। কয়েকজন মন্ত্রী আবাসন সংকটের কথা জানতে পেরে জানিয়েছেন, তাদের আপাতত বাসার প্রয়োজন নেই। কয়েকজন আবেদনই করেননি।
আবেদন করে বাসা না পাওয়া ছয় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল।
তাদের দেওয়ার মতো কোনো বাড়ি নেই বলে জানিয়েছে আবাসন পরিদফতর। একই কারণে আরও ১৭ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে বাসা বরাদ্দ দিতে পারেনি সরকার।
মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপ-মন্ত্রীদের বসবাসের জন্য বর্তমানে ১৬টি বাংলো ও ১৭টি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। এ ছাড়া নতুন ১০টি অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি হচ্ছে। এতে মন্ত্রীদের বসবাসের জন্য মোট বাসা হবে ৩৩টি। তবে নতুন ১০টি অ্যাপার্টমেন্টের কাজ শেষ হতে আরও কয়েক মাস লাগবে।
এর মধ্যে মন্ত্রিসভার পরিধি আরও বাড়তে পারে। কারণ, সর্বশেষ মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী ছাড়া সদস্য ছিলেন ৫২ জন। আর বর্তমান মন্ত্রিসভায় সদস্য রয়েছেন ৪৬ জন। ফলে নতুন ১০টি অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি হলেও আরও প্রায় ২০টি বাসা সংকট থাকবে।
জানা গেছে, মন্ত্রিত্ব শেষ হওয়ার তিন মাস পার হলেও এখনও সরকারি বাসায় বাস করছেন সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান (৫ নম্বর মিন্টো রোড), সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু (ছায়াবীথি-৬, ‘নিলয়’, হেয়ার রোড), সাবেক রেলপথমন্ত্রী মো. মজিবুল হক (২০ পার্ক রোড), সাবেক ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ (৩৫ নম্বর মিন্টো রোড), সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল (৫ নম্বর মিন্টো রোড), সাবেক মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ (মিনিস্টার্স অ্যাপার্টমেন্ট ১ নম্বর ভবনের দ্বিতীয় তলা পশ্চিমাংশ) এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত (ছায়াবীথি-২ ‘তন্ময়’, হেয়ার রোড)।
এ ছাড়া গত ৩ জানুয়ারি সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মারা গেলেও তার পরিবারের সদস্যরা এখনও ২১ বেইলি রোডের বাসায় বসবাস করছেন। মিনিস্টার্স অ্যাপার্টমেন্ট ১ নম্বর ভবনের চতুর্থ তলায় (পশ্চিমাংশ) বাস করছেন সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন সিকদার। এ ছাড়া ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এবং পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান পুনরায় দায়িত্ব নেওয়ার পর অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বাংলোতে যাওয়ার আবেদন করেন। কিন্তু বাংলো খালি না হওয়ায় অ্যাপার্টমেন্টগুলোও খালি করেননি তারা।
নতুন মন্ত্রীদের শপথের পরপরই তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি ২৩টি বাসা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু সাবেক মন্ত্রীরা বাসা না ছাড়ায় ১২ জন নতুন মন্ত্রী বরাদ্দকৃত বাসায় উঠতে পারেননি। আবাসন পরিদফতর থেকে সাবেক মন্ত্রীদের বাসা ছাড়ার জন্য একাধিকবার তাগাদা দেয়া হলেও তারা বাসা ছাড়েননি। কয়েকজন নতুন মন্ত্রী বাসা বরাদ্দ পাওয়ার পর নিজেও যোগাযোগ করেছেন। এরপরও তারা বাসা খালি করেননি।
২০০৬ সালের আগ পর্যন্ত কোনো সরকারের আমলেই মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপ-মন্ত্রীদের বাসভবন বরাদ্দে কোনো সংকট হয়নি। তবে ওয়ান-ইলেভেন সরকারের আমলে একাধিক সচিব মন্ত্রীদের বাসভবন বরাদ্দ নিয়ে পর্যায়ক্রমে এখনও বসবাস করছেন। সরকার বদল হলেও তাদের বাসা বদল হয়নি। ৯, ১০, ১১ ও ৩৮ মিন্টো রোডসহ আরও কয়েকটি বাসায় ২০০৬ সালের আগে মন্ত্রীরা বসবাস করলেও এখন সচিবরা বসবাস করছেন।
দ্য মিনিস্টার্স, মিনিস্টার্স অব স্টেট অ্যান্ড ডেপুটি মিনিস্টার্স (রেমিউনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট, ২০১৬ অনুযায়ী, সরকারি বাসায় না থাকলে মন্ত্রীরা বাড়ি ভাড়া বাবদ ৮০ হাজার টাকা এবং প্রতিমন্ত্রী ও উপ-মন্ত্রীরা ৭০ হাজার টাকা পাবেন।
এফএইচ/এসআর/এমকেএইচ