ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

শ্বশুর ফারুকের পক্ষে আদালতে যা বললেন পিয়া

জাগো নিউজ ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৯:৩০ পিএম, ৩১ মার্চ ২০১৯

‘আমি নিজেও এফআর টাওয়ারে অফিস করি। উনি ভূমির মালিক। কিন্তু ভবন ব্যবস্থাপনা করেন না। ব্যবস্থাপনার জন্য একটি অ্যাসোসিয়েশন রয়েছে। উনি ওই অ্যাসোসিয়েশনে নেই। তারাই বলতে পারবে টাওয়ারটাকে কেমন রেখেছে?’

‘ওই ভবনের লিফটও ঠিক ছিল না। ফারুক নিজে টাকা খরচ করে সবার কথা চিন্তা করে তা ঠিক করিয়েছেন। ২০০৮ সালে একবার আগুন লেগেছিল। তখন তিনি গুলশান থানাকে অবগত করেছিলেন যে, ভবনে যথেষ্ট অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই।’

রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ারের জমির মালিক প্রকৌশলী এস এম এইচ আই ফারুকের পক্ষে আদালতে শুনানিতে অংশ নিয়ে মডেল ও অভিনেত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া আদালতে এভাবেই বলছিলেন।

আরও পড়ুন> যেসব যুক্তিতে তাসভির-ফারুকের জামিন আবেদন

পিয়া বলেন, ‘১১ বছর পর একটা বড় দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। পুলিশ তাদের আবেদনে বলেছে, অন্য আসামি ধরার জন্য ফারুকের রিমান্ড প্রয়োজন। আমার কথা, ফারুক যখন ডেভেলপারের কাছে জমি দিয়ে দেন, এরপর ডেভেলপারের কাছ থেকে সেটি টেকওভার করে একটা অ্যাসোসিয়েশন। আমি বলব, দুজনই বয়স্ক মানুষ, দুজনকেই আমি চিনি। এ বয়সে এসে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়ে… যদি রিমান্ডে নেয়া হয় তাহলে কি টাওয়ার…আর কী ভোগ করবে? জীবন নিয়েই তো টানাটানি, স্যার।’

রিমান্ড ঠেকানোর জন্য শ্বশুর ফারুকের পক্ষে শুনানিতে অংশ নিয়েও ঠেকাতে পারেননি। ফারুক ও তাসভীর উল ইসলামকে সাতদিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। শুনানির একপর্যায়ে এস এম এইচ আই ফারুকের পক্ষে কথা বলা শুরু করেন এ অভিনেত্রী।

ঢাকা মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াসিন আহসান চৌধুরীর আদালতে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। বেলা ৩টা ২০ মিনিটে শুনানি শুরু হয়। কাঠগড়ায় দাঁড়ানো ছিলেন এস এম এইচ আই ফারুক ও তাসভীর উল ইসলাম।

আদালতে জমির মালিক ফারুকের পক্ষে রিমান্ড শুনানিতে তার জামিন আবেদন করা হয়। ফারুকের আইনজীবী ঢাকা বারের সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান খান রচি শুনানিতে আদালতের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ফারুক বয়স্ক মানুষ। তিনি ক্যান্সারের রোগী। তার কাগজগুলো ডিবির অফিসে দেয়া হয়েছিল। সেখানে সেগুলো আটকে রাখা হয়েছে। তাই আদালতে দিতে পারছি না।’

‘যদি আপনি তাকে (ফারুক) রিমান্ডে দেন তাহলে তারা (ডিবি পুলিশ) তাকে টর্চার করে মেরে ফেলবে। বিজ্ঞ আদালতের কাছে আমার নিবেদন, আপনি মানবিক দিক বিবেচনা করে অন্তত জেলখানায় দু’দিন, পাঁচদিন, ১০ দিন জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ প্রদান করুন।’

তার পক্ষের অপর আইনজীবী ঢাকা বারের সভাপতি গাজী শাহ্ আলম শুনানিতে বলেন, ‘উনি (ফারুক) জমির মালিক, জমি বুঝিয়ে দেয়ার পর তার আর কোনো দায়-দায়িত্ব থাকে না। তার শারীরিক অবস্থা, বয়স বিবেচনায় দয়া করে তাকে জামিন প্রদান করেন। প্রয়োজনে তাকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। পুলিশের হাতে দেয়া মানে আননেসেসারি একটা টর্চারের মধ্যে ঠেলে দেয়া।’

আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মনসুর রিপন বলেন, ‘একটা জমি যখন ডেভেলপারকে দেয়া হয়, তখন চুক্তি সম্পাদন হয়। ফারুক ভবনটি বুঝিয়ে দেন। বর্তমানে তিনি একা ভবনের মালিক নন। যারা ১০০ স্কয়ার ফুটের দোকান নিয়েছেন তারাও ওই জমির মালিক। তাই একা ফারুক সাহেবের ঘাড়ে দোষ চাপালে হবে না, মাননীয় আদালত।’

তিনি বলেন, ‘আরেকটা বিষয় আদালতের কাছে বলতে চাই, ১৮ তলার নকশা অনুমোদনের পর ভবনটি যে ২৩ তলা করা হয়েছে, অর্থাৎ পাঁচটা তলার মধ্যে একটা তলা তোলার জন্যও যদি আমার কোনো স্বাক্ষর থাকে তাহলে আমি বলব, আমাকে রিমান্ডে দেন। আমাদের কোনো সমর্থন ছিল না। আগুন লাগার পেছনে ভবনের ম্যানেজিং কমিটিতে যারা আছেন, ভবনটা যারা দাঁড় করিয়েছেন, তাদেরও দায় আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্যার, উনার ৭৩ বছর বয়স। এই বলে আমি এক্সট্রা কোনো ফায়দা নিতে চাই না। তবে তাকে যদি রিমান্ডে নেয়া হয়, সেখানে মানসিক টর্চার আর হ্যারাজমেন্ট ছাড়া কিছুই করা হবে না। আমাকে যা জিগাইতে চায়, যতদিন যতবার জিগাইতে চায় আমারে জিগাক, আমার কোনো আপত্তি নাই। সব বইলা দিমু।’

এ প্যানেলের আপর আইনজীবী বলেন, ‘গতকাল রাতে ফারুকের ইসিজি করা হয়েছে। উনার জীবনটাই ঝুঁকিপূর্ণ। উনি যদি না বাঁচেন, তাহলে বিচারটা করবেন কার? উনি নতুন করে অসুস্থ নয়, আগে থেকেই অসুস্থ। একবার উনার চেহারাটা দেখেন, স্যার। শরীরটা ফুলে গেছে উনার।’

শুনানিতে ভবনের বর্ধিত অংশের মালিক তাসভির উল ইসলামের আইনজীবী ছিলেন এহসানুল হোক সামাজি। তিনিও তার মক্কেলের রিমান্ড আবেদন নাকচ করে জামিনের আবেদন করেন। জামিনের রেফারেন্স হিসেবে তিনি আদালতকে বলেন, ‘২০১৭ সালে লন্ডনে তাসভির উল ইসলামের ওপেন হার্ট সার্জারি হয়। সেখানে তাকে টাইম টু টাইম (নিয়মিত) চেকআপে যেতে হয়। এছাড়া তিনি একজন সম্মানিত ব্যক্তি। প্লিজ তার রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করুন।’

আজ বেলা আড়াইটার দিকে তাদের দুজনকে আদালতে হাজির করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় দুই আসামিই উদ্বিগ্ন ছিলেন। তাদের রিমান্ড শুনানি সিএমএম কোর্টের অষ্টম তলায় অনুষ্ঠিত হয়। তবে ডিবির কর্মকর্তারা শুনানি শেষে তাদের লিফটে নিচে নামাতে চাইলে তারা হেঁটেই নামেন। সিঁড়িতে নামতে নামতে তাসভির উল তার ম্যানেজারের সঙ্গে ভবনের বিষয়ে আলোচনা করেন।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১টার দিকে বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ের পাশের ১৭ নম্বর সড়কে ফারুক রূপায়ন (এফআর) টাওয়ারের এ ভবনে আগুন লাগে। ভয়াবহ সেই অগ্নিকাণ্ডে ২৬ জন নিহত ও ৭৩ জন আহত হয়েছেন।

এমআরএম/পিআর

আরও পড়ুন