৫৭ ধারা নিয়ে ১১ নাগরিকের রিট হাইকোর্টে
এবার তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বাতিল চেয়ে রিট আবেদন করেছেন দেশের ১১ জন বিশিষ্ট নাগরিকের পক্ষে এক আইনজীবী। রোববার বিকেলে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদনটি দায়ের করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, তথ্য ও যোগোযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিবকে বিবাদী করা হয়েছে।
সোমবার হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন রিটকারীর আইনজীবী। এ নিয়ে তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ধারা চ্যালেঞ্জ করে তিন রিট দায়ের করা হয় হাইকোর্টে। যার (৫৭ ও ৮৬ ধারা) নিয়ে আইনজীবী ইউনুছ আলীর করা একটি রিট খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। ৫৭ ধারা চ্যালেঞ্জ করে শিশির মনিরের করা অপর রিটটি আংশিক শুনানি করে পরবর্তী শুনানির জন্য সোমবার দিন ঠিক করেছেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার সকালে ডাক ও রেজিস্ট্রি যোগে ১১ নাগরিকের পক্ষে একটি নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। ওইদিন সকালে এ ধারা বিলুপ্তি সম্পর্কে জানতে চেয়ে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, ও তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব বরাবর এ নোটিশ পাঠানো হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আহমেদ কামাল, আকমল হোসেনসহ ১১ ব্যক্তির পাঠানো নোটিশে বলা হয়েছে, আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা বাতিলে সরকারের পক্ষ থেকে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জানাতে হবে। অন্যথায় তারা এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে রিট করবেন।
আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় শাস্তি হিসেবে সর্বোচ্চ কারাদণ্ড ১৪ বছর ও ১ কোটি টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। অথচ একই অভিযোগে পর্নোগ্রাফি আইনে সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড ও ২০ লাখ টাকা জরিমানার কথা বলা হয়েছে। এটি সরাসরি বৈষম্য। আইনের এ ধারাটি সংবিধানের ২৭, ৩১, ৩২ এবং ৩৯ ধারার পরিপন্থী। রিটে বিবাদী করা হয়েছে আইন সচিব ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিবকে।
আইনি নোটিশ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন-২০০৬ (সংশোধনী ২০১৩) এর ধারা দুটি বাতিল চেয়ে বুধবার সকালে সরকারকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. ইউনুছ আলী আকন্দ।
ওই আইনের ৫৭ (১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েব সাইটে বা অন্য কোনো ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানি প্রদান করা হয়, তাহা হইলে তাহার এই কার্য হইবে একটি অপরাধ’।
‘(২) কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন অপরাধ করিলে তিনি ১ [অনধিক চৌদ্দ বৎসর এবং অন্যূন সাত বৎসর কারাদণ্ডে] এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন’।
এছাড়া ৮৬ ধারায় বলা হয়েছে, এই আইন বা তদধীন প্রণীত বিধি বা প্রবিধানের অধীন সরল বিশ্বাসে কৃত কোনো কার্যের ফলে কোনো ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হইলে বা হওয়ার সম্ভাবনা থাকিলে তজ্জন্য সরকার, নিয়ন্ত্রক, উপ-নিয়ন্ত্রক, সহকারী নিয়ন্ত্রক বা তাহাদের পক্ষে কার্যরত কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোনো দেওয়ানী বা ফৌজদারি মামলা বা অন্য কোনো প্রকার আইনগত কার্যক্রম গ্রহণ করা যাইবে না।
এফএইচ/একে/এএইচ/পিআর