তরুণীকে ধর্ষণ : ক্ষতিপূরণ দিতে পুলিশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের রুল
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সেকেন্দার হোসেন ও সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মাজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে এক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনায় রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
রুলে ধর্ষণের শিকার তরুণীকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ কেন দেয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এই ঘটনা রোধে সরকারের ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না রুলে তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে।
একইসঙ্গে মোটেল, গেস্ট হাউস, হোটেল, ডাক বাংলো, পুলিশ স্টেশন, পুলিশ স্টেশনের রেস্ট রুম, সেফ হোমে নারী ও শিশুদের যৌন হয়রানি থেকে রক্ষায় একটি স্কিম ও গাইডলাইন তৈরির কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), পুলিশ সুপার, মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সাটুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) আটজনকে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে রোববার হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আজ চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাস্টের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মো. আব্দুল হালিম ও তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট জামিউল হক ফয়সাল।
পরে রুলের বিষয়টি জানান রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. আব্দুল হালিম। তিনি বলেন, রুল ছাড়াও আদালত অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনাও দিয়েছেন। ১৮ এপ্রিলের মধ্যে ওই ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট, মেডিকেল রিপোর্ট/কেস ফাইলসহ সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় তথ্য আদালতে দাখিল করতে হবে।
নির্যাতনের শিকার তরুণী মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগে জানান, সাভারের আশুলিয়া এলাকায় তার এক খালা সাটুরিয়া থানার এসআই সেকেন্দারের কাছে প্রায় ৩ লাখ টাকা পাবেন। পাওনা টাকা আদায়ে ৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ওই খালা তাকে নিয়ে সাটুরিয়া থানায় যান।
এ সময় এসআই সেকেন্দার তাদের দু’জনকে নিয়ে থানা সংলগ্ন সাটুরিয়া ডাক বাংলোতে যান। কিছুক্ষণ পর সেখানে থানার এএসআই মাজহারুল ইসলাম হাজির হন। তরুণী ও তার খালাকে আলাদা রুমে আটকে রাখেন তারা। এরপর ভয়ভীতি দেখিয়ে ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা তরুণীকে ইয়াবা সেবন করিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। ৮ ফেব্রুয়ারি সকালে তরুণী ও তার খালার হাতে ৫ হাজার টাকা তুলে দিয়ে সেকেন্দার তাদের সাটুরিয়া থেকে চলে যেতে বলেন। ধর্ষণের ঘটনা কাউকে জানালে তরুণীকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখানো হয় বলেও লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
নির্যাতনের শিকার ওই তরুণী সাভারে ফিরে প্রথমে তার এক পরিচিত সাংবাদিকের কাছে এ ঘটনা জানান। পরে ধর্ষণের শিকার ওই তরুণী ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে সাটুরিয়া থানায় অভিযুক্ত দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। তার আগে দু’জনের বিরুদ্ধে জেলা পুলিশ সুপারের (এসপি) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন তিনি। তখন দুই কর্মকর্তাকেই থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।
মামলার পরদিন সকালে দু’জনকে গ্রেফতারের কথা জানায় পুলিশ। পরবর্তীতে ১২ ফেব্রুয়ারি আদালত মোহাম্মদ গোলাম সারোয়ার তাদের ছয় দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এফএইচ/এসআর/এনএফ/আরআইপি