ময়মনসিংহের ৫ যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে প্রতিবেদন চূড়ান্ত
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত অপহরণ, আটক, নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, আগুন দেয়া ও দেশান্তরে বাধ্য করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার কিতাব আলী ফকিরসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তদন্ত সংস্থা।
রোববার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে ধানমন্ডিস্থ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এম. সানাউল হক ছাড়াও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগম উপস্থিত ছিলেন। এটি তদন্ত সংস্থার ৬৮তম তদন্ত প্রতিবেদন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
আসামিদের বিরুদ্ধে এক নারীকে ধর্ষণের পর হত্যাসহ ৪৫ জনকে হত্যা, সাতজনকে অপহরণ, আটক ও নির্যাতন এবং একজনকে দেশান্তরে বাধ্য করার অভিযোগ রয়েছে। মামলায় ৫০ পৃষ্ঠার মূল প্রতিবেদনের সঙ্গে আরও ৮৩ পৃষ্ঠার নথিপত্রসহ মোট ১৩৩ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে তদন্ত সংস্থা। এতে তদন্ত কর্মকর্তাসহ ২৫ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
মামলায় গ্রেফতার হওয়া তিন আসামি হলেন- ধোবাউড়া পশ্চিম বালিগাঁও গ্রামের মো. কিতাব আলী ফকির (৮৫), মো. জনাব আলী (৬৮) ও মো. আব্দুল কুদ্দুছ (৬২)।
মামলার পাঁচ আসামিই ময়মনসিংহের ধোবাউড়াতেই অপরাধ সংঘটিত করেন, তখন এটি ছিল হালুয়াঘাট থানার অধীনে। আসামিদের প্রত্যেকেই বিএনপির রাজনীতি করেন। এর আগে তারা জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন বলেও জানান তারা। তবে, দুজন পলাতক আসামির নাম প্রকাশ করেনি তদন্ত সংস্থা।
মনোয়ারা বেগম বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ৩০ মে ও ৯ সেপ্টেম্বর আসামিরা ধোবাউড়ার বালিগাঁও ও তারাইকান্দি গ্রামে অপরাধ সংঘটিত করে। ২০১৭ সালের ৬ অাগস্ট মামলার তদন্ত শুরুর পর তা শেষ হয় চলতি মাসের ৭ মার্চ। এ সময়কালে সাক্ষী হিসেবে ৪০ জনের জবানবন্দি গ্রহণ করা হলেও তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ ২৫ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
প্রথম অভিযোগ
ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার বালিগাঁও গ্রামের মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তাকারী হাতেম আলী ওরফে গেন্দা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে ১৯৭১ সালের ৩০ মে ভারতে যাওয়ার প্রস্তুতিকালে আসামিরা তার বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় তারা হাতেম আলীকে আটক করে বাড়ির উঠানে এনে অমানুষিক নির্যাতন করে। হাতেম আলীর দুই স্ত্রী তাকে রক্ষা করতে এলে আসামিরা তিনজনকে গাছের সঙ্গে বেঁধে বাড়ির জিনিসপত্র লুট করে।
পরে তিনজনকেই ঘরে বন্দি করে বাইরে থেকে তালা দিয়ে আসামিরা চলে যায়। ভারতের শিববাড়ির মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে এ খবর পৌঁছালে মুক্তিযোদ্ধারা হাতেম আলীকে উদ্ধার করে। পরে তিনি স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যান। দেশত্যাগের এ খবর পেয়ে আসামিরা হাতেম আলীর বাড়ি-ঘরে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।
দ্বিতীয় অভিযোগ
১৯৭১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর আসামিরা সশস্ত্র রাজাকার ও পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী নিয়ে ধোবাউড়ার তারাইকান্দি গ্রামের মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগী, আশ্রয়দাতা শহীদ নূর মোহাম্মদ হোসেন আকন্দের বাড়িতে হামলা চালিয়ে আকন্দসহ তার দুই স্ত্রীকে হত্যা ও নাতি বৌকে ধর্ষণের পর হত্যা করে।
এরপর আসামিরা একই গ্রামের মো. ইছহাক আলী, মো. জমসেদ আলী (গুনা), মো. আব্দুর রাজ্জাক, মো. আব্দুল হেকিম ছাড়াও পার্শ্ববর্তী গ্রামের মো. সিরাজ আলী, মো. হাইদার আলী, মো. আব্দুল লতিফ, মো. মীর কাশেম, মো. রমজান আলী ও অজ্ঞাত ২৮ জনসহ মোট ৪১ জনকে অপহরণ, আটক, নির্যাতনের পর ৪৫ জনকে গুলি করে হত্যা করে।
এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ও মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ও সহযোগিতাকারী হিসেবে চিহ্নিত তারাইকান্দি গ্রামের মাহমুদ হোসেন আকন্দ ও মিয়া হোসেন আকন্দের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ঘরের জিনিসপত্র লুট ও লুটের পর জ্বালিয়ে দেয়।
এফএইচ/এমবিআর/বিএ/এমএস/জেআইএম