সুপারিশ বাস্তবায়ন না করে ১০০ কমিটি করেও লাভ নেই : হাইকোর্ট
>> সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হলেতো ৮০ শতাংশ দুর্ঘটনা এড়ানো যেত
>> আমলাদের ওপর হাইকোর্টের অসন্তোষ
২০১০ সালে নিমতলীর অগ্নিকাণ্ডের পর এই ধরনের দুর্ঘটনা রোধে ১৭ দফা সুপারিশ প্রস্তুত করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অথচ সে সুপারিশগুলো দীর্ঘ ৯ বছরেও বাস্তবায়ন না করায় আমলাদের ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।
আদালত বলেছেন, ‘দেশের উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিন-রাত দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন, অথচ নিমতলীর ঘটনার পর আমলারা এত বছরেও একটি সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি।’
চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় করা পৃথক পৃথক রিটের শুনানিতে মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন।
আহত ও নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়া ও পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন, গ্যাস সিলিন্ডার অপসারণ এবং নিমতলীর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির ১৭ দফা সুপারিশ বাস্তাবায়নের নির্দেশনা চেয়ে পৃথক রিট করা হয়। ওসব রিটের উপর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে শুনানি হয়েছে।
আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। অন্যদিকে, রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, ইউনুছ আলী আকন্দ, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও মো. রিয়াজ উদ্দিন। তাদের সঙ্গে ছিলেন সাগুফতা তাবাসসুম ও মাক্কিয়া ফাতেমা ইসলাম।
আদালতের বিরতির পর বেলা ২টার পর রিটের উপর শুনানি শুরু হয়ে চলে বিকেল পর্যন্ত। রিটকারী আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ তার রিট আবেদন পড়েন এবং ১৭ দফা সুপারিশ বাস্তবায়ন, সব কেমিক্যাল গোডাউন ঢাকার বাইরে স্থানান্তর ও ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার আরজি জানান।
এরপর অপর রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল তার শুনানিতে নিমতলীর দুর্ঘটনার পর গঠিত ১৭ দফা সুপারিশ বাস্তবায়ন করার সুপারিশ করেন। এ সময় আদালত বলেন, ‘ওই সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হলেতো ৮০ শতাংশ দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।’
এরপর অপর রিটকারীর পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না আদালতকে বলেন, এমন শহরে বসবাস করছি যেখানে হাঁটা যায় না, মানুষ মারা গেলে লাশ নেয়ার জায়গা পাওয়া যায় না, এমনকি মানুষের কবর দেয়ারও জায়গা পাওয়া যায় না। তাই আমাদের আরজি হলো, আগামী ২৫ বছরের মধ্যেও যেন এই শহরের মধ্যে কোনো শিল্প-কারখানা গড়ে তোলার সুযোগ না দেয়া হয়।
এ পর্যায়ে আদালত বলেন, ‘সরকার তো বসে নেই। তারা কাজ করছে। তারা ইতোমধ্যে ১০০টি শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলেছেন। তবে, আসল কথা হলো পুরো শহরের জন্য একটি মাস্টার প্ল্যান দরকার। প্রতিটি কল-কারখানায় সেফটি জোন থাকতে হবে, প্রয়োজনমতো জায়গা থাকতে হবে।’
এরপর রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার শুনানি শুরু করেন। শুনানিতে তিনি চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডের পর যেসব কমিটি গঠন করা হয়েছে আদালতকে তার বর্ণনা তুলে ধরেন। তখন আদালত বলেন, ‘সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন না করে ১০০ কমিটি করেও কোনো লাভ হবে না। বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিন-রাত দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন, অথচ নিমতলীর ঘটনার পর আমলারা এত বছরেও একটি সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি।’
এরপর আদালত অগ্নি নির্বাপণের ১৭ দফা সুপারিশ বাস্তবায়ন না করায় সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তাকে কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে মামলার বিবাদী মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন মন্ত্রণালয় সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব, শিল্প মন্ত্রণালয় সচিব ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্টদের এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
এর আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ, অ্যাডভোকেট অমিত দাস গুপ্ত, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার নূর মোহাম্মদ আজমী ও খন্দকার মো. সায়েদুল কাউছার এবং সাগুফতা তাবাসসুম হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় পৃথক চারটি রিট দায়ের করেন।
এসব রিটে হতাহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান, পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যালের গোডাউন ও কারখানা অপসারণ ও বিক্রির উদ্দেশ্যে মজুদ করা গ্যাস সিলিন্ডার অপসারণের নির্দেশনা চায়া হয়। পাশাপাশি নিমতলী ট্র্যাজেডির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির ১৭ দফা সুপারিশ বাস্তবায়নের নির্দেশনা চাওয়া হয়। আজ ওসব রিটের উপর শুনানি হয়।
এফএইচ/জেডএ/জেআইএম