ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

রাঘববোয়ালদের ছেড়ে দুর্বলদের নিয়ে ব্যস্ত দুদক : হাইকোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৫:২৯ পিএম, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কার্যকলাপে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। ক্ষোভ প্রকাশ করে আদালত বলেন, ‘দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত রাঘববোয়ালদের ছেড়ে দিয়ে শুধু দুর্বলদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে দুদক। যেখানে ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়ে যাচ্ছে, সেখানে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকরা স্কুলে যাচ্ছেন কী যাচ্ছেন না, তা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে তারা।’

বৃহস্পতিবার কোচিং সেন্টারের ওপর জারি করা রুলের শুনানিতে হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ কথা বলেন।

দুদক দুর্নীতিবাজ রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না উল্লেখ করে আদালত বলেন, ছোট দুর্নীতির আগে বড় বড় দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন। তবেই দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব হবে।

এরপর বিকেলে কোচিং বাণিজ্য বন্ধে সরকারের করা নীতিমালা বৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট।

এর ফলে দেশের সরকারি-বেসরকারি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য কোচিং বাণিজ্য বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোখলেসুর রহমান।

আদালতের বরাত দিয়ে মো. মোখলেসুর রহমান আরো বলেন, ব্যাংকের হাজার কোটি টাকা লুট হলেও দুদক ব্যস্ত শিক্ষক হাজিরা নিয়ে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সম্পর্কে জনসাধারণের সাধারণ ধারণা জন্মেছে যে, দুদক দুর্বলদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও সমাজের রাঘববোয়ালদের বিরেুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না।

কোচিং বাণিজ্য নিয়ে করা রিটের শুনানিতে হাইকোর্ট বলেন, কোচিং বাণিজ্য কারা করে তা সবাই জানে, কিন্তু ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়ে যাচ্ছে, সেখানে দুদক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ক্লাসে আসছেন কিনা তা নজরদারি করছে। 

শুনানিতে এসব মন্তব্য করার পরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোচিং বাণিজ্য বন্ধে সরকারের করা নীতিমালা বৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, এই নীতিমালার বাইরে কোনো কোচিং করা যাবে না।

কোচিং বাণিজ্য নিয়ে পৃথক ৫টি রিট আবেদনে জারি করা রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে এ রায় দেন আদালত।

আদালতে রিট আবেদনকারীপক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমির, অ্যাডভোকেট মো. নাসির উদ্দিন। দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেসুর রহমান।

কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে মো. জিয়াউল কবির দুলু ২০১১ সালে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। এই রিট আবেদনে আদালত রুল জারি করেন। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোচিং বাণিজ্য বন্ধে ২০১২ সালে একটি নীতিমালা করে।

পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও দুদক থেকে ভিকারুননিসা স্কুল ও কলেজের শিক্ষক ড. ফারহানা খানম, মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ কবীর চৌধুরী, গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলের শিক্ষক শাহজাহান সিরাজ এবং অভিভাবক মো. মিজানুর রহমানকে নোটিশ দেয়।

এই নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে পৃথক পৃথক রিট আবদেন করেন। এ রিট আবেদনে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। এসব রুলের ওপর চুড়ান্ত শুনানি শেষে আজ রায় দেন আদালত।
এরমধ্যে ভিকারুননিসা স্কুল ও কলেজের শিক্ষক ড. ফারহানা খানমকে দেওয়া নোটিশ অবৈধ বলে রায় দেন আদালত। আর ২০১১ সালে করা রিট আবেদন অকার্যকর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বাকি তিনটি রিট আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।

আদালত বলেন, সরকার রাষ্ট্রের প্রয়োজনে সময়ে সময়ে পরিপত্র, নীতিমালা, গাইডলাইন, সার্কুলার, বিজ্ঞপ্তি জারি করতে পারে। এটা সরকারের সাংবিধানিক অধিকার। এজন্য জাতীয় সংসদে আইন পাস করা পর্যন্ত অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই।

আদালত বলেন, গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। যেখানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার জন্য দুদকের জনবলের সংকট রয়েছে সেখানে দুদক কোন কোন দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত করবে তার একটি অগ্রাধিকার তালিকা থাকতে হবে দুদকের কাছে।

এফএইচ/এমবিআর/এসএইচএস/এমকেএইচ

আরও পড়ুন