তিন তলা থেকে ফেলে হত্যা : নাহিদ কারাগারে
রাজধানীর গেন্ডারিয়ায় প্রতিবেশীর আড়াই বছর বয়সী শিশু সন্তান আয়েশাকে বাড়ির তিন তলার বারান্দা থেকে ফেলে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার নাহিদকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
রোববার তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় নাহিদ স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা গেন্ডারিয়া থানার উপ-পরিদর্শক হারুন অর রশিদ। কিন্তু পরবর্তীতে জবানবন্দি দিতে অস্বীকৃতি জানান নাহিদ।
এরপর ঢাকা মহানগর হাকিম নিবারা খায়ের জেসি তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গেন্ডারিয়ার দীননাথ সেন রোডের একটি টিনশেড বাড়িতে বাবা-মা ও বোনদের সঙ্গে থাকত শিশু আয়েশা। প্রতিদিন সকালে আয়েশার মা-বাবা কাজে যান। দিনের বিভিন্ন সময় গেন্ডারিয়ার ‘সাধনা ঔষধালয়’র সামনের গলিতে খেলা করত শিশুটি।
গত ৫ জানুয়ারি বিকেলে খেলছিল আয়েশা। সন্ধ্যার দিকে টিনশেড বস্তির পাশের চারতলা বাড়ির সামনে আয়েশার রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। পরে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ।
এলাকায় জানাজানি হয় শিশুটি বারান্দা থেকে লাফ দিয়ে পড়ে মারা গেছে। তবে এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে আয়েশার বাবা ইদ্রিস আলী বাদী হয়ে প্রতিবেশী নাহিদের বিরুদ্ধে ‘হত্যা’ মামলা করেন। মামলায় ‘ধর্ষণের পর হত্যার’ অভিযোগ আনা হয়।
তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে নাহিদকে (৪৫) গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে তাকে গ্রেফতারের সময়ও ছিল নাটকীয়তা। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে নাহিদ বাসার তৃতীয় তলার খোলা জানালা দিয়ে লাফ দেন। এতে তার দুই পা ভেঙে যায়। এ সময় আহত অবস্থায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। নেয়া হয় আদালতে।
এরপরই উন্মোচিত হয় নাহিদের কুকর্ম। পরদিন স্বেচ্ছায় আদালতে আসে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া নাহিদের মেয়ে বুশরা। নিজের বাবার কুকর্মের কথা তুলে ধরে আদালতে জবানবন্দি দেয় সে।
আদালতে বুশরা জানায়, ঘটনার দিন শনিবার সন্ধ্যার দিকে বাসার বারান্দায় বসে ছিল বুশরা। এমন সময় বাবা নাহিদের রুম থেকে ছোট শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনতে পায় সে। কান্না শুনে সে বাবার বেডরুমে যায়। দরজা খুলে দেখে, তার বাবা বিছানায় আর শিশু আয়েশা তার কোলে কাঁদছে।
তখন বাবা নাহিদ বুশরাকে ধমক দিয়ে বলে, ‘এই তুই এখানে এসেছিস কেন? তখন বুশরা অন্য রুমে চলে যায়। এরপর নাহিদ শিশু আয়েশাকে তিন তলার খোলা জানালা দিয়ে ফেলে দেয়।’
৯ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) ফরিদ উদ্দিন বলেন, প্রতিবেশী শিশু আয়েশাকে খিচুড়ি খাওয়ানোর প্রলোভন দেখিয়ে বাসায় ডেকে নেয় নাহিদ। পরে তাকে তিন তলা থেকে ফেলে হত্যা করে। তাকে এর বেশি কিছু জিজ্ঞাসা করা সম্ভব হয়নি, কারণ তিনি অনেক বেশি অসুস্থ।
ডিসি বলেন, বিকৃত মানসিকতা ও মাদকাসক্ত এবং সামাজিক অবক্ষয় এর অন্যতম কারণ। যেসব জায়গায় এসব ঘটনা ঘটছে সেখানে অভিভাবকরা একটু কম সচেতন।
৫ বছর আগে নাহিদের স্ত্রী মারা যান। এরপর তিনি আর বিয়ে করেননি। ১২ বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে নাহিদ ওই বাসায় থাকতেন।
জেএ/জেডএ/জেআইএম