ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

খালেদার আদালতে দিনভর যা হলো

জাহাঙ্গীর আলম | প্রকাশিত: ০৬:১০ পিএম, ০৩ জানুয়ারি ২০১৯

>> হুইল চেয়ারে আদালতে খালেদা
>> এফবিআইয়ের প্রতিবেদন ট্রায়ালে
>> নির্বাচনের বিষয়ে কিছু বলার নেই
>> অভিযোগ গঠন শুনানি ১৩ জানুয়ারি
>> সাজা দিলে দিয়ে দেন

বছরের শুরু ও একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে আজ পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থিত বিশেষ জজ আদালতে প্রথম হাজির করা হয়। এদিন নাইকো দুর্নীতি মামলার অভিযোগ গঠন শুনানির দিন ধার্য ছিল। দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে হুইল চেয়ারে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। বেলা ২টা ১০ মিনিটের দিকে শুনানি শেষে আবার কারাগারে নেয়া হয়। এই কারাগারেই দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বন্দি রয়েছেন খালেদা জিয়া।

সাজা দিলে দিয়ে দেন

কারাগার থেকে আদালতে হাজির করার পর বেগম খালেদা জিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বিচারককে বলেন, এতো ছোট জায়গায় মামলা চলতে পারে না। এখানে আমাদের কোনো আইনজীবী বসতে পারেন না। এখানে মামলা চললে আমি আর আদালতে আসব না। আমাকে সাজা দিলে দিয়ে দেন।
এ সময় বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান বলেন, এই আদালতে আমি নতুন। বিষয়টি নিয়ে আমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবো।

এফবিআইয়ের প্রতিবেদন গ্রহণের শুনানি ট্রায়ালে

নাইকোর কাছ থেকে ঘুষ নেয়ার অভিযোগে কানাডীয় পুলিশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই যে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে তা গ্রহণের বিষয় শুনানি ট্রায়ালে হবে বলে জানিয়েছেন বিচারক।

আজ প্রতিবেদনটি গ্রহণের বিষয় শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। অন্যদিকে প্রতিবেদনের উপর আসামি পক্ষের আপত্তি দাখিলের জন্যও দিন ধার্য ছিল।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল শুনানির শুরুতে বলেন, মামলাটি অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে। তাই মামলাটির অভিযোগ গঠন শুনানি হোক।

এ সময় খালেদার আইনজীবী মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার বলেন, কাজল সাহেব হয়তো ভুলে গেছেন। আজ কানাডীয় পুলিশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই যে প্রতিবেদন দিয়েছেন তা গ্রহণের বিষয় শুনানির জন্যও দিন ধার্য রয়েছে। এরপর বিচারক বলেন, প্রতিবেদনের উপর বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া অন্য কেউও আপত্তি দাখিল করেনি। মামলাটির বিচার কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি। তাই প্রতিবেদন গ্রহণের শুনানি ট্রায়াল আদালতে অনুষ্ঠিত হবে।

ক্ষমতায় থাকলে মামলা করতে হয়

শুনানি চলাকালে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ক্ষমতায় থাকতে হলে মামলা করতে হয়। তাই আমার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এদিন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ তার নিজের পক্ষে অভিযোগ গঠন শুনানি নতুন করে শুরু করেন। শুনানির এক পর্যায়ে তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে কোনো কারণ ছাড়াই এই মামলায় জড়ানো হয়েছে। তিনি এই বিষয় কিছুই জানেন না। এ সময় খালেদা জিয়া বলেন, ক্ষমতায় থাকতে হলে মামলা করতে হয়। তাই আমার নামে মামলা করা হয়েছে।

শুনানি শুরু হওয়ার আগে মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, মামলাটি অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে। মওদুদ সাহেব আড়াই বছর শুনানি বিলম্বিত করেছেন। তার কারণে মামলাটির শুনানি শেষ হচ্ছে না। মওদুদ বলেন, এটা একবারে ভুল কথা। আমার জন্য মামলাটি বিলম্বিত হচ্ছে না।

এরপর মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার বিচারককে উদ্দেশ্য করে বলেন, মাননীয় আদালত এই মামলায় আপনি নতুন। তাই আপনি নতুন করে শুনলে ভালো হয়। তখন বিচারক বলেন, আমি সবারটাই নতুন করে শুনবো।

এরপর মামলার আসামি সেলিম ভূইয়ার পক্ষে এক আইনজীবী অভিযোগ গঠন শুনানি করেন। গিয়াস উদ্দিন মামুনের পক্ষে সময়ের আবেদন দেন তার আইনজীবী হেলাল উদ্দিন। এরপর মওদুদ তার নিজের পক্ষে অভিযোগ গঠন শুনানি শুরু করেন। শুনানির এক পর্যায়ে বিচারক বলেন, আপনি ২০১৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি অভিযোগ গঠন শুনানি করছেন।

এ সময় খালেদা জিয়া দুদকের আইনজীবী কাজলকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আপনি তো বলেছিলেন দুই বছর আর বিচারক বলছে এক বছর ধরে অভিযোগ গঠন শুনানি করছেন।

শুনানি এক পর্যায়ে মওদুদ মামলার কার্যক্রম মুলতবি রাখার জন্য আবেদন করেন। এ সময় দুদকের আইনজীবী কাজল বিচারককে উদ্দেশ্য করে বলেন, আগামী সাপ্তাহে মামলাটির শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হোক।

কাজলের এমন কথায় ক্ষেপে গিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, কাজল বললে জজ সাহেবের বলার কী দরকার। তখন কাজল বলেন, ম্যাডাম আমি তো রাষ্ট্রপক্ষ। আমাকে তো বলতে হবে।

এরপর মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার আদালতকে বলেন, আমরা আইনজীবীরা খালেদার দেখা করার জন্য একটি আবেদন দিয়েছি। আপনি দয়া করে মঞ্জুর করেন। বিচারক আবেদনটি নামঞ্জুর করে বলেন, খালেদা জিয়াতো জামিনে আছে। এখানে আমার অনুমতি দেয়ার কী আছে।

তালুকদার বলেন, আদালত কক্ষে তার সঙ্গে কথা বলার অনুমতি দেন। বিচারক বলেন, আপনারা কথা বলতে পারেন তার সঙ্গে। এরপর বেলা ১টা ৫৬ মিনিটে আদালত মামলাটির পরবর্তী অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য ১৩ জানুয়ারি দিন ধার্য করে এজলাস ত্যাগ করেন বিচারক।

নির্বাচনের বিষয়ে কিছু বলার নেই

বিচারক এজলাস কক্ষত্যাগ করার পর খালেদা জিয়ার সঙ্গে ১৬ মিনিটের মত আইনজীবীরা কথা বলেন। শুরুতে মওদুদ আহমেদ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলা শুরু করেন। কথার এক পর্যায়ে মওদুদের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে যান খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়া মওদুদকে বলেন, আপনার সঙ্গে হবে না। ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন কোথায়? তখন খোকন খালেদা জিয়ার সামনে আসেন। খোকনের সঙ্গে মামলা ও রাজনৈতিক বিষয়ে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন খালেদা জিয়া।

এরপর সাংবাদিকরা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয় খালেদা জিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয় আমার কিছুই বলার নেই। এর পর বেলা ২টা ১০ মিনিটের দিকে খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেয়া হয়।

উল্লেখ্য, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দুদকের দায়ের করা দুই মামলায় ১০ ও ৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। আপিলে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ড বেড়ে ১০ বছর এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিশেষ আদালতে ৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন তিনি।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার পর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়া আছেন। সেখান থেকেই গত ৬ অক্টোবর চিকিৎসকদের পরামর্শে খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে নেয়া হয়। টানা এক মাস ২ দিন বিএসএমএমইউয়ে চিকিৎসা নেয়ার পর ৮ নভেম্বর তাকে কারাগারে ফিরিয়ে নেয়া হয়।

জেএ/জেএইচ/এমকেএইচ

আরও পড়ুন