ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

খালাসপ্রাপ্ত ‘মন্ত্রী মায়া’ সম্পর্কে যা বললেন অ্যাটর্নি জেনারেল

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৬:২৫ পিএম, ২৮ নভেম্বর ২০১৮

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, ‘শাসনতন্ত্রের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নৈতিক স্খলনের কারণে দুই বছর বা তার অধিক সময়ের জন্য দণ্ডপ্রাপ্ত হলে, সেক্ষেত্রে তিনি নির্বাচন করতে পারবেন না। যদি তিনি (দণ্ডিত ব্যক্তি) ইতোমধ্যে খালাসও পান বা মুক্তিও পান; মুক্তি লাভ করার পরও তাকে পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হবে।’

‘মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াও খালাস পেয়েছেন এবং এ আদেশ তার জন্যও প্রযোজ্য হবে‘- এমন মতও দেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ এ আইন কর্মকর্তা।

বুধবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে অ্যার্টনি জেনারেল এমন মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘গতকাল (২৭ নভেম্বর) হাইকোর্টে পাঁচটি দরখাস্ত দাখিল হয়েছিল। আমান উল্লাহ আমান, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ওদুদ ভূঁইয়া, মশিউর রহমান ও আব্দুল ওহাবের পক্ষ থেকে। তারা তাদের পিটিশনে বলেছিলেন, তারা দণ্ডপ্রাপ্ত কিন্তু তারা নির্বাচন করতে চান। এজন্য তাদের দণ্ড ও সাজা যাতে স্থগিত করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘কাল (২৭ নভেম্বর) হাইকোর্ট ডিভিশনে আমি এ বক্তব্য দিয়েছিলাম। আমাদের শাসনতন্ত্রের ৬৬ অনুচ্ছেদ মতে, দুই বছর বা তার অধিক সময়ের জন্য দণ্ডপ্রাপ্ত হন নৈতিক স্খলন-জনিত কারণে। সেক্ষেত্রে তিনি নির্বাচন করতে পারবেন না। যদি তিনি ইতোমধ্যে খালাসও পান বা মুক্তিও পান। মুক্তি লাভ করার পরও তাকে পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হবে। যারা দরখাস্ত করেছিলেন হাইকোর্ট তাদের দরখাস্ত খারিজ করেন এ অনুচ্ছেদের ওপর নির্ভর করে।’

মাহবুবে আলম বলেন, ‘আবেদনকারী পাঁচজনের মধ্যে একজন এ জেড এম জাহিদ হোসেন আপিল বিভাগে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে একটি দরখাস্ত করেছিলেন। সকলপক্ষকে শুনে আপিল বিভাগ কোনো রকম স্থগিত করেননি, কোনো আদেশও প্রদান করেননি। ফলে হাইকোর্ট বিভাগের আদেশটি আপিলে বহাল আছে।’

‘অর্থাৎ যে ব্যক্তিরা নৈতিক স্খলন-জনিত কারণে অন্যূন দুই বছর দোষিসাব্যস্ত হবেন তারা কোনোরকম নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। যদি ইতোমধ্যে তারা মুক্ত হয়ে যান অর্থাৎ খালাসপ্রাপ্তও হন তাদেরও পাঁচ বছরকাল অপেক্ষা করতে হবে নির্বাচনের জন্য।’

ওই রায়ের ফলে কতজন নির্বাচনে অযোগ্য হলেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের কাছে ফাইল রয়েছে। তারা এখন সর্বোচ্চ আদালতের এ নির্দেশনা, আমি মনে করি অবশ্যই নির্বাচন কমিশন মাথায় নিয়ে তাদের কাজগুলো করবে।’

কিছুদিন আগে সাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াও খালাস পেয়েছেন; এ আদেশ কি তার জন্যও প্রযোজ্য হবে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার বক্তব্যও তাই।’

ঋণখেলাপিরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি রিপোর্টে যদি তাদের নাম থাকে, অবশ্যই তারা পারবেন না। বেশ কয়েকজন ইতোমধ্যে সিআইবি রিপোর্টের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ চেয়ে আপিল বিভাগে মামলা করেছিলেন। আপিল বিভাগ তাদের পক্ষে কোনো স্থগিতাদেশ দেননি, আমার জানা মতে।’ তারা কারা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এরা বিভিন্ন ব্যবসায়ী।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আজও পাঁচজনের মধ্যে একজন আপিলের আবেদন নিয়ে গেছেন। যেহেতু তার আবেদনের বিষয়ে আজ কোনো আদেশ দেননি (আদালত)। সুতরাং অন্যগুলোর ব্যাপারেও একই আদেশ হবে বলে আমরা ধরে নিতে পারি।‘

সংবিধানের ‘অনুচ্ছেদ- ৬৬’ কি খালেদা জিয়ার জন্য- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা ভুল কথা। এটা আমাদের সংবিধান যখন প্রণয়ন হয়েছিল ১৯৭২ সালে, তখন থেকেই ছিল। খালেদা জিয়ার জন্য এ বিধান নতুন করে সংযোগ করা হয়নি। সুতরাং যারা এ কথা বলেন, তারা সঠিক কথা বলেন না।’

‘এটা সবার জন্য প্রযোজ্য, খালেদা জিয়া হোক বা যেকোনো প্রার্থীও হোক।’

বিএনপি থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, এ আদেশটা ‘সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলন’- এমন বক্তব্যের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এটাও ভুল কথা। রাজনৈতিক দলগুলো নানা রকম মন্তব্য করছে, এ রায় সম্বন্ধে বা আমার সম্বন্ধে। অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে সংবিধানে যেটা লেখা আছে আদালতকে সেটা জানানো বা উল্লেখ করা আমার বড় দায়িত্ব। সংবিধান হলো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। সাংবিধানিক বিধানগুলো আদালতকে জানানো আমার নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য।’

‘মুক্তি লাভটা ধরবেন যে দিন তার সাজাটা বাতিল হয়ে গেল। সেদিন থেকে ধরতে হবে। সেটা যে কোর্ট থেকেই হোক না কেন। সাজাটা আপিল বিভাগ থেকে বাতিল হতে পারে বা এমন হলো তিনি কিছুই করলেন না। তিনি সাজাটা ভোগ করে মুক্তি লাভ করলেন। তখন থেকে পাঁচ বছর।’

‘এমন সাজাপ্রাপ্তরা যদি নমিনেশন পেপার কমিশনে দাখিল করেন এবং কমিশন যদি তা বাতিল করে দেন; এটি চ্যালেঞ্জ করে আবার যদি তারা হাইকোর্টে আসেন তাহলে কী হবে’- এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘যেকোনো ব্যক্তিই আইনের আশ্রয় নিতে পারেন, তাকে বাধা দেয়া যাবে না। তারা হাইকোর্টে আসলে তখন দেখা যাবে।’

‘আমার মনে হয়, হাইকোর্ট বা কোনো কোর্টের পক্ষে সংবিধানের যে বিধান আছে তার বাইরে যাওয়ার উপায় নেই। আর কোনো পথ খোলা আছে বলে আমার মনে হয় না’- যোগ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

এফএইচ/এমএআর/জেআইএম

আরও পড়ুন