চুয়াডাঙ্গায় চোখ হারানো ১৭ ব্যক্তির ক্ষতিপূরণের রায় আপিলে বহাল
চুয়াডাঙ্গায় ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে চক্ষুশিবিরে চোখ হারানো ১৭ জনকে ওষুধ (ট্রাইপেন ব্লু) সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আইরিশ এন্টারপ্রাইজকে পাঁচ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার রায় বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে।
বৃহস্পতিবার ক্ষতিপূরণ দেয়া-সংক্রান্ত রায় স্থগিত চেয়ে আইরিশ এন্টারপ্রাইজের করা আবেদনে কোনো আদেশ দেননি (নো অর্ডার) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত সদস্যের বেঞ্চ। ফলে, হাইকোর্টের দেয়া ক্ষতিপূরণের আদেশ বহাল থাকল বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
আদালতে আজ আইরিশের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী শ ম রেজাউল করিম। হাইকোর্টে রিট আবেদনকারী আইনজীবী অমিত দাশগুপ্ত নিজেই শুনানিতে অংশ নেন। ইম্প্যাক্টের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তানিয়া আমীর।
এর আগে গত ২১ অক্টোবর হাইকোর্ট এক রায়ে ওই কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের চক্ষুশিবিরে চোখ হারানো ১৭ জনকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০ লাখ টাকা করে দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর মধ্যে প্রত্যেককে পাঁচ লাখ টাকা করে ইম্প্যাক্ট এবং বাকি পাঁচ লাখ টাকা চক্ষুশিবিরে অস্ত্রোপচারে অনুমোদনহীন ওষুধ (ট্রাইপেন ব্লুব) সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আইরিশ এন্টারপ্রাইজকে দিতে বলা হয়েছিল।
ইতোমধ্যে ইম্প্যাক্ট চোখ হারানো ১৭ জনসহ ক্ষতিগ্রস্ত ২০ জনকে পাঁচ লাখ টাকা করে প্রদান করেছে। অন্যদিকে, পাঁচ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার আদেশ স্থগিত চেয়ে আইরিশ এন্টারপ্রাইজ আপিল বিভাগে আবেদন করে।
এর আগে গত ১১ নভেম্বর চেম্বার বিচারপতি নুরুজ্জামানের আদালত আইরিশের করা আপিল শুনানির জন্য পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। আজ ওই আবেদনের শুনানি শেষে আদালত এ আদেশ দেন।
গত ২৯ মার্চ ‘চক্ষুশিবিরে গিয়ে চোখ হারালেন ২০ জন!’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন ছাপা হয়। এটি সংযুক্ত করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশগুপ্ত রিট করেন, যার ওপর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ১ এপ্রিল হাইকোর্ট ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়সহ কয়েকটি বিষয়ে রুল দেন। রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ২১ অক্টোবর চোখ হারানো ১৭ জনকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০ লাখ টাকা করে দিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
চুয়াডাঙ্গা শহরের ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে চক্ষু শিবিরে চিকিৎসা প্রাপ্ত‘চোখ হারানো’ ১৭ জনকে প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ প্রদানে গত ২১ অক্টোবর রায় দেন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আদেশে ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারকে ৫ লাখ টাকা ও আইরিশ কোম্পানিকে ৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়। এর মধ্যে ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টার কর্তৃপক্ষ ৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ প্রদান করলেও ওষধ কোম্পানি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে।
চলতি বছরের ১ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গা শহরের ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে চক্ষু শিবিরে চিকিৎসাপ্রাপ্ত ‘চোখ হারানো’ ২০ জনকে প্রত্যেককে এক কোটি করে টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেয়া হবে না’-তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, চুয়াডাঙ্গার ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেল্থ সেন্টারে তিন দিনের চক্ষু শিবিরের দ্বিতীয় দিন ৫ মার্চ ২৪ জন নারী-পুরুষের চোখের ছানি অপারেশন করা হয়। অপারেশনের দায়িত্বে ছিলেন চিকিৎসক মোহাম্মদ শাহীন।
তবে বাসায় ফিরেই ২০ জন রোগীর চোখে ইনফেকশন দেখা দেয়। এসব রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৫ মার্চ অপারেশনের পর ৬ মার্চ তাদের প্রত্যেককেই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়। বাড়ি ফিরে ওইদিনই কারও বিকেলে, কারও সন্ধ্যায়, কারও বা রাত থেকে চোখে জ্বালা-যন্ত্রণা ও পানি ঝরতে শুরু করে।
পরদিনই তারা যোগাযোগ করেন ইম্প্যাক্ট হাসপাতালে। তাদের তখন গুরুত্ব না দিয়ে কোনো রকম চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু যন্ত্রণা অসহনীয় হয়ে উঠলে ফের তারা ইম্প্যাক্টে যান। সেখান থেকে তখন কয়েকজন রোগীকে স্থানীয় এক চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
স্থানীয় ওই চক্ষু বিশেষজ্ঞ তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দেন। এদের মধ্যে চারজন রোগী নিজেদের উদ্যোগে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত স্বজনদের নিয়ে ঢাকায় আসেন। পরে ইম্প্যাক্ট থেকে ১২ মার্চ একসঙ্গে ১৬ জন রোগীকে ঢাকায় নেয়া হয়। ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ৫ মার্চের ওই অপারেশনের ফলে এদের চোখের ভয়াবহ ক্ষতি হয়ে যায়।
এফএইচ/এসআর/আরআইপি