ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

কাঁদলেন সেই শিক্ষক শ্যামল কান্তি

জাহাঙ্গীর আলম | প্রকাশিত: ০৫:০৫ পিএম, ২৩ অক্টোবর ২০১৮

‘সেলিম ওসমানের হাততো লোহার মতো শক্ত। সে থাপ্পড় মারায় আমার কান ফেটে রক্ত বের হয়। আমি এখন কানে শুনতে পাই না। বিনা কারণে সে আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেছে। আজ তার বিচার পেলাম না। আমি এর বিচার ঈশ্বরের ওপর ছেড়ে দিলাম।’

মঙ্গলবার ঢাকা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম এমদাদুল হক শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছনার ঘটনায় করা মামলায় নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানকে অব্যাহতি প্রদান করেন। এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে আদালতে এসব কথা বলেন শিক্ষক শ্যামল কান্তি। বিচারককে তিনি তার রক্তমাখা ছেঁড়া প্যান্ট ও শার্ট দেখান।

তিনি বিচারককে বলেন, ‘শিক্ষকরা তো জাতির বিবেক। ওই ঘটনায় আমার কোনো দোষ ছিল না। জনসম্মুখে আমাকে মারধর করা হয়েছে, যা ইন্টারনেটের মাধ্যমে সারা জাতি দেখেছে। আমি এর ন্যায়বিচার চাই।’

শুনানিতে আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আনোয়ার কবির বাবুল বলেন, ‘শিক্ষকরা তো জাতির বিবেক। তারা মানুষ গড়ার কারিগর। এই শিক্ষককে জনসম্মুকে কান ধরিয়ে উঠবস করায় পুরো শিক্ষক জাতিকে অপমান করা হয়েছে। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে সেলিম ওসমানের এমন করা উঠিত হয়নি। জুডিশিয়াল তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে তিনি শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে মারধর করেছেন। বিচারের মাধ্যমে ন্যায়-অন্যায় প্রমাণিত হবে। তাকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আবেদন করছি সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করার।’

অপরদিকে সেলিম ওসমানের আইনজীবী ব্যারিস্টার রায়হান ও সিদ্দিকুর রহমান শুনানিতে বলেন, ‘জুডিশিয়াল তদন্তে শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে মারধরের কথা প্রমাণ হয়নি। কান ধরে উঠবসের যে কথা বলা হয়েছে তা শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে জনরোষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে বাঁচানোর জন্য করা হয়েছে। তাই এই মামলার দায় থেকে সেলিম ওসমানকে অব্যাহতির আবেদন করছি।’

উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক সেলিম ওসমানকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি প্রদান করেন। মামলার অপর আসামি অপুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে ২০১৬ সালের ১৩ মে নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছিত করা হয়। স্থানীয় সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম ওসমান সবার সামনে ওই শিক্ষককে কান ধরে ওঠবস করান। এর একপর্যায়ে শ্যামল কান্তি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

ওই রাতেই তাকে প্রথমে বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরদিন শহরের খানপুরে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ডা. শফিউল আজমের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন থাকার পর ২০ মে পুলিশি প্রহরায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অধীনেই তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন।

২০১৬ সালের ১০ আগস্ট শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কান ধরে ওঠবস করানোর ঘটনায় স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান জড়িত কি না- সে বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।

আদালত ওইদিন আদেশে বলেন, ‘কান ধরে ওঠবসের ঘটনায় স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের সম্পৃক্ততা নেই মর্মে পুলিশের প্রতিবেদনে প্রকৃত সত্য তুলে ধরা হয়নি। পুলিশের প্রতিবেদন অসম্পূর্ণ ও অগ্রহণযোগ্য।’

২০১৭ সালের ১৯ জানুয়ারি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শেখ হাফিজুর রহমান বিচার বিভাগীয় প্রতিবেদন হলফনামা আকারে দাখিল করেন।

জেএ/এসএইচএস/পিআর

আরও পড়ুন