সমাবেশের অনুমতি চেয়ে হাইকোর্টে ঐক্যফ্রন্টের রিট
ড.কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ডাকা সমাবেশের অনুমোদন না দেয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। রোববার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিট করেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সিলেটের সমন্বয়ক আলী আহমদের পক্ষে আইনজীবী জগলুল হায়দার আফ্রিক। ড. কামাল হোসেন রিট আবেদনের শুনানিতে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে।
রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), সিলেটের পুলিশ কমিশনারসহ ৫ জনকে বিবাদী করা হয়েছে। `সমাবেশের অনুমতি না দেয়া কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না’ তা জানতে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে রিটে।
আগামীকাল সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে রিট আবেদনটির ওপর শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী জগলুল হায়দার আফ্রিক।
ড. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ডাকা সমাবেশ করতে না দেয়ায় সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করা হয়েছে। তাই সংবিধান অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে রিট করা হয়েছে। এ বিষয়ে আগামীকাল আমরা শুনানি করবো।
এর আগে সভা-সমাবেশে বাধা দেয়ার ঘটনার প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টের আসার কথা গত শনিবার জানান জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন। ওইদিন তিনি বলেন, সভা-সমাবেশ করা নাগরিকের মৌলিক অধিকার। সরকার এ অধিকার হরণ করতে পারে না। এ কারণে, আমরা আদালতের শরণাপন্ন হব। আদালতের কাছে প্রতিকার চাইব।
গত ১৩ অক্টোবর (শনিবার) জোট হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর ২৩ অক্টোবর সিলেটে সমাবেশ করার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি পালনের কথা ঘোষণা করেছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন এ কর্মসূচি পালনে অনুমতি দেয়নি। ফলে এক দিন পিছিয়ে ২৪ অক্টোবর সিলেটে সমাবেশ পালনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা। এখন পর্যন্ত এ সমাবেশ করারও অনুমতি মেলেনি। এ অবস্থায় উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় জোটটি। যাতে ২৪ অক্টোবরসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পরবর্তী কর্মসূচি পালনে প্রশাসনের তরফ থেকে কোনো বাধা না আসে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে সিলেটে ওই সমাবেশের অনুমতি না দেয়ার বিষয়ে পুলিশ জানায়, এই সমাবেশকে ঘিরে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই নগরের নিরাপত্তার স্বার্থে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি।
গত ১৮ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) দুপুরে পুলিশের পক্ষ থেকে সমাবেশের অনুমতি না দেয়ার কথা জানানো হয় বলে ওইদিন সন্ধ্যায় বিষয়টি জানান, সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সিলেটের সমন্বয়ক আলী আহমদ।
সেদিন আলী আহমদ বলেন, আমরা ২৩ অক্টোবর দুপুরে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে ১৬ অক্টোবর মঙ্গলবার মহানগর পুলিশ কমিশনার বরাবর লিখিত আবেদন করেছিলাম। দুপুরে আমার মোবাইলে কল দিয়ে কোতোয়ালি থানার ওসি সমাবেশের অনুমতি না দেয়ার কথা জানান। অনুমতি না পেলেও জাতীয় ঐক্যজোটের কেন্দ্রীয় নেতারা ২৩ তারিখ সিলেটে আসবেন। ওইদিন তারা হজরত শাহজালাল (রহ.) ও হজরত শাহ পরানের (রহ.) মাজার জিয়ারত করবেন।
তিনি আরও বলেন, সমাবেশ হবে কি না এ ব্যাপারে আমরা পরে আলাপ-আলােচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। আমরা এখনো আশাবাদী পুলিশ আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অনুমতি দেবে।
এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সেলিম বলেন, এই সমাবেশকে ঘিরে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই নিরাপত্তার স্বার্থে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি।
গত ১৬ অক্টোবর বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার সমন্বিত সরকারবিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রথম বৈঠক শেষে জানানো হয়, ২৩ অক্টোবর সিলেট সফরের মধ্য দিয়েই যাত্রা শুরু করবে এই জোট। জোটের শীর্ষ নেতারা এইদিন সিলেট সফরে এসে হজরত শাহজালালের (র.) মাজার জিয়ারত করবেন। সেই সঙ্গে সিলেটের রেজিস্টারি মাঠে ঐক্যফ্রন্টের প্রথম সমাবেশেরও আয়োজন করা হবে বলে জানানো হয়।
এই সমাবেশকে ঘিরে সিলেটের রাজনীতিতে কিছুটা উত্তেজনা দেখা দেয়। একদিকে সমাবেশ সফলের প্রস্তুতি শুরু করেছিলেন বিএনপিসহ জোটের শরিক দলের নেতারা।
অন্যদিকে, ছাত্রলীগসহ ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতা জাতীয় ঐক্যজোটের অনেক নেতার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে সিলেটে তাদের প্রতিহতের ডাক দেন। মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এই ডাক দেন তারা।
এফএইচ/জেডএ/পিআর