মীর কাসেমের মামলা রোববারের তালিকায়
একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের চেয়ারম্যান মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ড খালাস চেয়ে করা আপিল সুপ্রিমকোর্টের কার্য তালিকায় এসেছে।
রোববার সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার নেতৃত্বে তিন বিচারপতির আপিল বিভাগের বিশেষ বেঞ্চে এই মামলার শুনানির জন্য রয়েছে। বেঞ্চের অন্যান্য বিচারপতিরা হলেন- বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
সুপ্রিমকোর্ট সূত্রে জানা গেছে, যার নেতৃত্বে এই বিশেষ বেঞ্চ গঠন করা হয় তিনি প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা। প্রধান বিচারপতি ঢাকার বাইরে রয়েছেন।
এর আগে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত মীর কাসেম আলীর আপিলের মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
গত ২৮ মে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ মামলার সার সংক্ষেপ দাখিলের জন্য রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের প্রতি নির্দেশ দেন। রোববার মামলাটির শুনানির জন্য দিন তারিখ ঠিক করা হতে পারে।
গত ২৮ মে মীর কাসেম আলীর আপিলের সার সংক্ষেপ দাখিলের জন্য আইনজীবীরা চার সপ্তাহ সময় আবেদন করে। পরে আদালত আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষকে আপিলের সার সংক্ষেপ দাখিলের জন্য আরো চার সপ্তাহের সময় দেন। সার সংক্ষেপ দাখিলে উভয়পক্ষকে এর আগেও একদফা সময় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ।
ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ডের খালাস চেয়ে মীর কসেম আলীর পক্ষে ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই আবেদন করা হয়। আপিলে মীর কাসেম আলীর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীন তুহিন।
পরে আইনজীবী শিশির মোহাম্মদ মনির জানান, ‘মীর কাসেম আলীর পক্ষে ১৮১টি গ্রাউন্ডে মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চেয়ে এ আপিল করা হয়েছে। দেড়শ’ পৃষ্ঠার মূল আপিলসহ ৫ ভলিয়মে ১ হাজার ৭৫০ পৃষ্ঠায় বিভিন্ন ডকুমেন্ট পেশ করা হয়েছে।’
একই বছরের ২ নভেম্বর তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল জনাকীর্ণ ট্রাইব্যুনালে এ রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য বিচারপতি ছিলেন- মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম।
রায়ে বলা হয়, প্রসিকিউশন আনীত ১৪টি অভিযোগের মধ্যে ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৯, ১০, ১১, ১২ ও ১৪ নম্বর অভিযোগে মীর কাসেম আলী দোষী প্রমাণিত হয়েছেন। তবে ১, ৫, ৮ ও ১৩ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে এসব অভিযোগ থেকে খালাস (অব্যাহতি) দেয়া হয়।
প্রমাণিত অভিযোগগুলোর মধ্যে ২ নম্বর অভিযোগে তাকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। ৩, ৪, ৬, ৭, ৯ ও ১০ নম্বর অভিযোগে তাকে ৭ বছর করে মোট ৪২ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়। এছাড়াও ১৪ নম্বর অভিযোগ ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। এই ৮টি অভিযোগে তাকে সর্বমোট ৭২ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়।
১১ ও ১২ নম্বর অভিযোগে মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। ১১ নম্বর অভিযোগে রয়েছে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিমসহ ছয়জনকে আটক, নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ। এ অভিযোগে বিচারকরা সর্বসম্মতিক্রমে মীর কাসেমকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। ১২ নম্বর অভিযোগে রয়েছে রঞ্জিত দাস ও টুন্টু সেনকে নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ। এ অভিযোগে বিচারকদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে রায় দেয়া হয়।
১১ ও ১২ নং অভিযোগ ছাড়া বাকি ১২টি অভিযোগই অপহরণের পর আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ মীর কাসেমের বিরুদ্ধে। মামলায় মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ২৪ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। মীর কাসেম আলীর পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেন তার ছোট বোন মমতাজ নুরুদ্দিনসহ তিনজন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় ট্রাইব্যুনালের আদেশে ২০১২ সালের ১৭ জুন মীর কাসেম আলীকে গ্রেফতার করা হয়। সে থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
এফএইচ/এসএইচএস/আরআইপি