ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

জনকণ্ঠের সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদকের সাজা

প্রকাশিত: ০৪:১২ এএম, ১৩ আগস্ট ২০১৫

সাকার রায় নিয়ে প্রধানবিচারপতিকে জড়িয়ে নিবন্ধ প্রকাশ করে আদালত অবমানার অভিযোগে দৈনিক জনকণ্ঠের প্রকাশক, সম্পাদক আতিকুল্লাহ খান মাসুদ ও নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়কে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করে রায় দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের জরিমানা অনাদায়ে সাত দিনের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সংগে আদালতের কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের দুই জনকে এজলাস কক্ষে অবস্থানের দণ্ড ঘোষণা করেন আপিল বিভাগ।
তাদের দুইজনকে পৃথকভাবে দশ হাজার টাকা করে মোট বিশ হাজার টাকা কোনো দাতব্য প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার জন্য বলেছেন  আদালত। এ সময় আদালতে প্রায় তিন শতাধিক আইনজীবী, দেশী-বিদেশী বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

আদালত তার রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, ১৯২৬ সালের প্রণীত আদালত অবমাননার আইন যুগোপযোগী করতে হবে। একই সঙ্গে বলা হয়, এই সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও টকশোতে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হবে। আদালত মনে করেন যে, গঠনমূলক সমালোচনা করা যাবে। কিন্তু দেখতে হবে কোনো আইন যেন ভঙ্গ না হয়।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার(এসকে) সিনহার নেতৃত্বে ছয় সদস্যের আপিল বিভাগের বৃহত্তর বেঞ্চ  এই আদেশ দেন।

বেঞ্চের অপর বিচারপতিরা হলেন বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

এর আগে উভয় পক্ষের শুনানি শেষে গত ১০ আগস্ট সোমবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে ছয় সদস্যের সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের পূর্নাঙ্গ বেঞ্চ রায়ের জন্য এই দিন ঠিক করে আদেশ দেন।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় বিচারপতিরা এজলাসে বসেন। এর পর রায় পড়া শুরু করেন। এ সময় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নাগরিকদের চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা রয়েছে। তবে তা নিরঙ্কুশ নয়, আইন দ্বারা নির্ধারিত। সংবাদমাধ্যমে স্বাধীনতার ব্যবহার অবারিত করা যাবে না এবং সংকুচিতও করা যাবে না। জনকণ্ঠ বিচারকদের প্রশাসনিক কাজে হস্তক্ষেপ করেছে। তাদের প্রতিবেদনে বিচার বিভাগ সম্পর্কে কুৎসা রটনা করা হয়েছে। ১৮২৬ সালের আইন অনুযায়ী এটা আদালত অবমাননার শামিল। তবে সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব ক্ষমতা রয়েছে, তারা ইচ্ছা করলে আদালত অবমাননার অভিযোগে দণ্ড দিতে পারবেন।

তার আগে ৯ আগস্ট রোববার সম্পাদক আতিকুল্লাহ খান মাসুদ ও নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়ের আদালত অবমানার জবাব দাখিলের শুনানি আপিল বিভাগের বৃহত্তর বেঞ্চে শুনানি হয়। ওই দিন শুনানি মুলতবি করে পরের দিন আবারও শুনানি করে মামলাটি রায়ের জন্য ১৩ আগস্ট বৃহস্পতিবার দিন ঠিক করেন।

শুনানিতে জনকণ্ঠের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন সালাহ উদ্দিন দোলন। অপর দিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটনি জেনারেল মাহবুবে আলম।

শুনানিতে আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন, জনকণ্ঠের প্রতিবেদনে আদালত অবমানার মতো কোন ঘটনা ঘটেনি। এখানে একজন বিচারতিকে নিয়ে বলা হয়েছে। পুরো বিচার বিভাগ আপিল বিভাগ হাইকোর্টে কোন কিছুকে জড়িয়ে কথা বলা হয়নি। আমি আশা করি সত্য কথা বলা আদালত অবমাননা নয়। আমি আশা করি সুপ্রিমকোর্টেকরি ন্যায় বিচার পাব।
অপরদিকে শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতকে বলেন, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলার রায় ঘোষণার আগেই দৈনিক জনকণ্ঠ যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তা আদালত অবমাননার শামিল। এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে রায়কে প্রভাবিত করা হয়েছে এবং জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে। জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায়।

তিনি বলেন, একজন বিচারপতির সঙ্গে প্রধান বিচারপতির কথার যে রেকর্ড করা হয়েছে তা শুধু আদলত অবমানাই নয় এটি তথ্য-প্রযুক্তি আইনেরও বিরোধী।

তার আগে গত ২৯ জুলাই বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায়ের পরে দৈনিক জনকণ্ঠের সম্পাদক আতিকুল্লাহ খান মাসুদ ও নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়কে তলব করে স্ব-প্রনোদিত আদেশ দেন আপিল বিভাগ। আদালত অবমাননার দায়ে কেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না-তাদেরকে ৩ আগস্ট হাজির হয়ে এর ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। সে অনুযায়ি তারা গত তিন আগস্ট আপিল বিভগে হাজির হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে জবাব দাখিলে সময় প্রার্থনা করেন।

গত ১৬ জুলাই দৈনিক জনকণ্ঠে ‘সাকার পরিবারের তৎপরতা/পালাবার পথ কমে গেছে’ শিরোনামে উপসম্পাদকীয় লেখেন স্বদেশ রায়। সে লেখায় সাকা চৌধুরীর আপিল মামলার রায়কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কথা উল্লেখ করা হয়।জনকণ্ঠের সম্পাদকীয়তে বলা হয়, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবার প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে।

২৯ জুলাই সাকা চৌধুরীর আপিলেও মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার রায়ের পরপরই জনকণ্ঠের সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদককে তলব করে আদেশ দেয় আদালত। একই সঙ্গে জনকণ্ঠের এ দুই সাংবাদিককে কেন দণ্ড দেওয়া হবে না, এ মর্মে রুল জারি করেন আদালত।

এফএইচ/এএইচ/আরআইপি