ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

শহিদুলকে ‘নির্যাতন’ : প্রতিবেদন চেয়েছেন আদালত

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৭:০৭ পিএম, ০৯ আগস্ট ২০১৮

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ‘উসকানিমূলক মিথ্যা’ তথ্য প্রচারের অভিযোগে গ্রেফতার আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে ডিবি হেফাজতে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে কিনা- তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

বিষয়টি পরীক্ষা করে স্বরাষ্ট্র সচিবকে আগামী সোমবারের (১৩ আগস্ট) মধ্যে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

আদেশ প্রসঙ্গে শহিদুল আলমের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন- ২০১৩ এর ২ (৬) অনুযায়ী তাকে নির্যাতন করা হয়েছে কিনা- সে বিষয়ে প্রতিবেদন চেয়েছেন আদালত।

শহিদুলের রিমান্ডের বৈধতা চ্যালেঞ্জ এবং হাসপাতালে পাঠিয়ে চিকিৎসার জন্য তার স্ত্রী রেহনুমা আহমেদের করা রিট আবেদনের নিষ্পত্তি করে বৃহস্পতিবার বিকেলে হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ মো. দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি ইকবাল কবীরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে এদিন শহিদুল আলমের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন এবং রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার। এছাড়া আদালতে উপস্থিত ছিলেন ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার জোতির্ময় বড়ুয়া প্রমুখ।

এর আগে একই আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ০৭ আগস্ট হাইকোর্ট বেঞ্চ শহিদুল আলমকে দ্রুত হাসপাতালে স্থানান্তরের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে শহিদুলের শারীরিক অবস্থার বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

আদালতের আদেশ অনুযায়ী শহিদুলকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে নেয়া হয় এবং চার সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। বিকেলে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল থেকে তাকে আবার গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহ-আল-হারুন পরে সাংবাদিকদের বলেন, শহিদুলকে ভর্তি করার মতো অবস্থা তারা দেখেননি। এরপর আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা বৃহস্পতিবার সকালে তাদের প্রতিবেদন হাইকোর্টে জমা দেন।

কিন্তু ওই প্রতিবেদন নিয়ে আপত্তি জানিয়ে রিটকারীপক্ষের অন্যতম আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন শুনানিতে বলেন, শহিদুল আলমকে গ্রেফতারের পর ‘নির্যাতন করায়’তারা রিট আবেদনটি করেছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে কেবল তার সুস্থতার পরীক্ষা হয়েছে। ওই বোর্ডে কোনো মনোবিদ না থাকায় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের বিষয়গুলো প্রতিবেদনে আসেনি। এ কারণে প্রতিবেদনটি ‘অসম্পূর্ণ’।

আদালতের আদেশের পর ব্যারিস্টাার সারা হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩-এর ২ (৬) ধারা অনুযায়ী, শহিদুল আলমকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে কিনা- তা পরীক্ষা করে আগামী সোমবারের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিবকে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন হাইকোর্ট।

উল্লেখ্য, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে গত ৩ ও ৪ অগাস্ট জিগাতলা এলাকায় সংঘর্ষের বিষয়ে কথা বলতে বেশ কয়েকবার ফেসবুক লাইভে আসেন অধিকারকর্মী আলোকচিত্রী শহিদুল। ওই আন্দোলনের বিষয়ে বিদেশি সংবাধমাধ্যম আল-জাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি সরকারের সমালোচনাও করেন।

গত রোববার রাতে শহিদুলকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনে রমনা থানায় মামলা দায়ের হয়। সোমবার তাকে নিম্ন আদালতে তুলে রিমান্ডের আবেদন করে ডিবি পুলিশ। শুনানি শেষে অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নূর সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মামলায় ‘কল্পনাপ্রসূত তথ্যের’ মাধ্যমে জনসাধারণের বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে ‘মিথ্যা প্রচার’ চালানো, উসকানিমূলক তথ্য উপস্থাপন, সরকারকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ ও অকার্যকর’ হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উপস্থাপন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ‘অবনতি ঘটিয়ে’ জনমনে ‘ভীতিও সন্ত্রাস ছড়িয়ে’ দেয়ার ষড়যন্ত্র এবং তা বাস্তবায়নে ইলেকট্রনিক বিন্যাসে ‘অপপ্রচারের’ অভিযোগ আনা হয় আলোকচিত্রী শহিদুলের বিরুদ্ধে।

গত সোমবার আদালতে তোলার আগে গাড়ি থেকে নামার সময় শহিদুল সাংবাদিকদের বলেন, “আমাকে আঘাত করা হয়েছে। আমার রক্তমাখা পাঞ্জাবি ধুয়ে আবার পরানো হয়েছে।”আর হাকিম আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “গ্রেফতারের সময় তার চোখ-মুখ বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে গাড়িতে তোলা হয়েছিল। তারা আমাকে মোসাদ, আইএসআই’র এজেন্ট বলে গালি দেয়, দেশদ্রোহীও বলে তারা। তারা আমাকে মারধরও করে।”

মঙ্গলবার শহিদুলকে হাসপাতালে পাঠানোর আবেদন জানিয়ে হাইকোর্টে আসেন তার স্ত্রী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক রেহনুমা। রিট আবেদনে বলা হয়, পুলিশ হেফাজতে শহিদুলকে ‘নির্যাতন’ এবং চিকিৎসা না দিয়ে তাকে রিমান্ডে পাঠানোর মাধ্যমে সংবিধানের ৩১, ৩২, ৩৩ এবং ৩৫ (৫) অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করা হয়েছে।

এফএইচ/এএইচ/এমএআর/পিআর

আরও পড়ুন