কুমিল্লার হত্যা মামলায় খালেদার জামিন আবেদন খারিজ
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমায় আটজনকে নিহতের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করেছেন হাইকোর্ট। এই মামলায় এখন আবার জামিন আবেদন করা হবে বলে জানান ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান।
সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি এসএম মজিবুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে আজ খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভেকেট এজে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। তাদের সঙ্গে ছিলেন কায়সার কামাল, এ কে এম এহসানুর রহান, অ্যাডভোকেট মাসুদ রানা, সালমা সুলতানা সোমা প্রমুখ। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যার্টনি জেনারেল মো. মমতাজ উদ্দিন ফকির। তাদের সঙ্গে ছিলেন ডেপুর্টি অ্যার্টনি জেনারেল ড. বশির উল্লাহ।
এর আগে গত ২ জুলাই কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানায় করা হত্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া ৬ মাসের জামিন স্থগিত করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সঙ্গে সঙ্গে, জামিন নিয়ে জারি করা হাইকোর্টের রুল চার সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।
রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী হাইকোর্টে রুল শুনানির জন্য ১০ জুলাই দিন ঠিক করা হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে মামলার শুনানি শেষে আজ মামলাটি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করা হয়।
গত ২৮ মে কুমিল্লার নাশকতার দুই মামলায় ৬ মাসের জামিন দেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ। এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পর গত ২৯ মে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিনাদেশ স্থগিত করেন এবং ৩১ মে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির আদেশ দেন। ৩১ মে শুনানির পর আপিল বিভাগ খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন স্থগিত রাখেন এবং রাষ্ট্রপক্ষকে লিভ টু আপিল করতে আদেশ দেন। ২৪ জুন এ বিষয়ে শুনানি শেষে ২ জুলাই আদেশের দিন ধার্য করা হয়। ২ জুলাই কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানায় করা হত্যামামলায় খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া ছয় মাসের জামিন স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে, এ মামলায় জামিন বিষয়ে হাইকোর্টের জারি করা রুল চার সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলা হয়। আজ ওই রুলের শুনানি শেষে আদেশ দেন আদালত।
২০১৫ সালের শুরুর দিকে ২০দলীয় জোটের অবরোধ চলাকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রামে দুষ্কৃতিকারীদের ছোড়া পেট্রলবোমায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে আইকন পরিবহনের একটি বাসের সাতজন যাত্রীর মৃত্যু হয়। আহত হন ২০ জন। এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা করা হয়।
২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি চৌদ্দগ্রাম থানায় করা মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ ৭৭ জন আসামির মধ্যে ৪৭ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা আছে। জামিনে আছেন ২৯ জন এবং জেলহাজতে রয়েছেন একজন।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের দণ্ড নিয়ে পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের পুরাতন কারাগারে বন্দি রয়েছেন। আইনজীবীরা জানিয়েছেন খালেদা জিয়াকে এখন মুক্তি পেতে হলে কুমিল্লার হত্যা মামলা ছাড়াও নড়াইলের মানহানির মামলায় জামিন পেতে হবে। আর স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বির্তকিত বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে নড়াইল আদালতে দায়ের মানহানি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। এ আদেশের বিরুদ্ধে দু-একদিনের মধ্যে হাইকোর্টে আপিল আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।
এফএইচ/জেডএ/এমএস