খালেদার দণ্ড থেকে খালাসের আপিল শুনানি বৃহস্পতিবার
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় নিম্ন আদালতের দেয়া পাঁচ বছরের দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ বাকি আসামিদের আপিল এবং সাজা বাড়াতে দুদকের আবেদনের শুনানির জন্য আগামী বৃহস্পতিবার (১২ জুলাই) দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট। ওইদিন সকাল সাড়ে ১০ টায় এ বিষয়ে শুনানি শুরু হবে বলে জানান আইনজীবীরা। ওইদিন খালেদা জিয়ার চার মাসের জামিনের মেয়াদও শেষ হচ্ছে।
খালেদা জিয়া ছাড়াও দুর্নীতির এ মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদের করা পৃথক তিনটি আপিল এবং খালেদার সাজা বাড়ানোর জন্য দুদকের করা আপিলের ওপর শুনানির দিনও ঠিক করা হয়েছে। একই দিনে এই মামলায় খালেদা জিয়াকে দেয়া চার মাসের জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি চেয়ে আবেদনেরও শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
নির্ধারিত দিনে সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই দিন ঠিক করে আদেশ দেন। আদালত বলেছেন, কোনো পক্ষ থাকুক আর নাই থাকুক ওইদিন শুনানি শুরু করা হবে। এছাড়া জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে হাইকোর্টে ১২ জুলাই বৃহস্পতিবার আদেশ দেয়া হবে।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট এ জে মুহাম্মদ আলী। অপর দিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। তার সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফরহাদ আহমেদ। দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, আবদুর রেজাক খান, জয়নুল আবেদীন, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, বদরুদ্দোজা বাদল, কায়সার কামাল, অ্যাডভোকেট আনিছুর রহমান খান, মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, মাসুদ রানা, ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান, ফাইয়াজ জিবরান প্রমুখ।
এর আগে ৩ জুলাই আপিল শুনানি মুলতবি রাখতে খালেদা জিয়ার করা আবেদন নিষ্পত্তি করে হাইকোর্ট আপিল শুনানির জন্য ৮ জুলাই দিন রেখেছিলেন। পরে তা পিছিয়ে সোমবার দিন ঠিক করেন আদালত।
এর আগে গত ১৬ মে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া চার মাসের জামিন বহাল রাখেন। রায়ে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে পাঁচ বছরের দণ্ডের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে করা খালেদা জিয়ার আপিল নিষ্পত্তি করতে বলা হয়। খালেদাকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন বাতিলে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের করা আপিল খারিজ করে দিয়ে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই রায় দেন।
এ মামলায় ছয় আসামির মধ্যে খালেদা জিয়াসহ তিনজন কারাগারে বন্দি। বাকি তিন আসামি পলাতক। কারাগারে খালেদা জিয়া ছাড়া বাকি দুই আসামি হলেন- মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ।
পলাতক তিনজন হলেন- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি বকশীবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান মামলাটিতে খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। একইসঙ্গে খালেদার ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত।
রায় ঘোষণার ১১ দিন পর ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রায়ের সার্টিফায়েড কপি বা অনুলিপি হাতে পান খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। এরপর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ২০ ফেব্রুয়ারি তারা এ আবেদন করেন। ২২ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ এবং অর্থদণ্ড স্থগিত করে নথি তলব করেন।
এরপর ৭ মার্চ অপর আসামি মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামালের আপিলও শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। ১০ মে আরেক আসামি শরফুদ্দিনের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন আদালত।
এই মামলায় পাঁচ বছরের দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করে জামিন আবেদনের পর খালেদা জিয়াকে ১২ মার্চ চার মাসের জামিন দেন হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের পর গত ১৬ মে তা বহাল রেখে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এফএইচ/এসএইচএস/পিআর