সপ্তাহে একবার সন্তানকে দেখতে পারবেন বাবা
সাড়ে আট বছর বয়সী শিশু সাজফা সাজিদাকে আপাতত মায়ের হেফাজতে রাখার আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে আদেশে বলা হয়েছে, সপ্তাহে কমপক্ষে একবার নিজের শিশুসন্তানকে দেখতে পারবেন বাবা। এ ছাড়া আগামী ২৪ জুলাই পরবর্তী আদেশের জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলা যায় কি না সে প্রচেষ্টা চালাতে বলেছেন আদালত।
শিশু কন্যাকে নিজের হেফাজতে নিতে হাইকোর্টে বাবার করা আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি শেষে আদালত বুধবার এই আদেশ দিয়েছেন। হাইকোর্টের বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
শিশুটির মা তৌহিদা আক্তারের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট অমিত দাস গুপ্ত। তার সঙ্গে ছিলেন, মো. শাহিনুর রহমান শাহীন ও সুভাস চন্দ্র দাস। শিশুর বাবার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন এএসএম শাহরিয়ার কবির।
জানা যায়, নওগাঁর সদর উপজেলার ভাঙ্গাড়িয়া গ্রামের মো. সাজ্জাদুর রহমানের সঙ্গে একই উপজেলার কুসুমদি গ্রামের তৌহিদা আক্তারের বিয়ে হয় ২০০৮ সালের ২৭ জুন। পরের বছরের ১৫ ডিসেম্বর তাদের সংসারে জন্ম নেয় কন্যা সন্তান সাজফা সাজিদা। কিন্তু সংসারে শুরু হয় টানাপোড়েন। একপর্যায়ে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর তৌহিদাকে তালাক দেন সাজ্জাদুর।
এ ঘটনার পরপরই সাজ্জাদুরের বিরুদ্ধে যৌতুক চাওয়ার অভিযোগে নওগাঁ থানায় গত ২০ জানুয়ারি মামলা করেন তৌহিদা। এ মামলায় সাজ্জাদুর জামিন নিয়েছেন। ওদিকে মামলায় তদন্ত শেষে সাজ্জাদুরের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। এ অবস্থায় মামলা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন সাজ্জাদুর। এ আবেদনে তৌহিদার করা মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এ অবস্থায় মেয়েকে নিজের কাছে নিতে গত ২৬ মে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন সাজ্জাদুর। এ রিট আবেদনে গত ৩০ মে এক আদেশে রুল জারি করেন হাইকোর্ট এবং শিশু সাজিদাকে আদালতে হাজির করতে মা ও নওগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন। ২৭ জুন শিশুটিকে হাইকোর্টে হাজির করতে বলা হয়। এই আদেশ পেয়ে নওগাঁ থানার পুলিশ গত ২৫ জুন শিশুটিকে মায়ের কাছ থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে রাখে। এরপর নির্ধারিত দিন বুধবার সকালে তাকে হাইকোর্টে হাজির করে।
শিশুকে পুলিশের হেফাজতে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় আদালত পুলিশ সদস্যদের ভর্ৎসনা করেছেন। আদালত বলেন, মা’সহ শিশুটি হাজির করার দায়িত্ব ছিল আপনাদের। কিন্তু মায়ের কাছ থেকে নিয়ে আলাদা করে রাখা সঠিক হয়নি। ভবিষ্যতে এরকম যাতে না হয় সেজন্য পুলিশকে সতর্ক করে দেন আদালত।
এদিকে হাইকোর্টের আদেশের খবর পাওয়ার পর আইনি সহায়তা চেয়ে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটিতে আবেদন করেন তৌহিদা। আবেদনটি পেয়ে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি অনুসন্ধান করে তাকে আইনগত সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। অসহায় তৌহিদার পক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য লিগ্যাল এইড কমিটির প্যানেল আইনজীবী অ্যাডভোকেট অমিত দাস গুপ্তকে নিযুক্ত করা হয়। এই আইনজীবীই বুধবার হাইকোর্টে তৌহিদার পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন।
বুধবার আইনজীবীদের বক্তব্য শোনার পর আদালত তৌহিদা ও সাজ্জাদুরের বক্তব্য শোনেন। এ সময় তৌহিদা আদালতকে বলেন, তিনি এখনও সাজ্জাদুরের সঙ্গে সংসার করতে রাজি আছেন। কিন্তু সাজ্জাদুর আবার আগের মতো সংসার করার পক্ষে কোনো মত দেননি। এ অবস্থায় আদালত একসঙ্গে আবার সংসার করা যায় কি না বা কোনো সমঝোতা করা যায় কি না সেজন্য আগামী ২৪ জুলাই পরবর্তী আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন।
এফএইচ/জেডএ/জেআইএম