মা-বাবার কারণে ‘দুধের শিশু’কেও আসতে হয় আদালতে
‘আপনাদের (মা-বাবা) কারণে দুধের শিশুকে আদালতে আসতে হয়েছে। আপনারাই আপনাদের শিশুর ভবিষ্যত ধ্বংস করছেন।’ মঙ্গলবার একটি মামলার শুনানিতে এমন মন্তব্য করেন হাইকোর্ট।
বাবা-মায়ের দ্বন্দ্ব চলতে থাকায় সন্তানকে দেখারও সুযোগ পাননি বাবা। তাই নিজের সন্তানের দেখা পেতে আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি।
আদালত শিশুটির মা-বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, যেহেতু দুজনের কেউই আর বিয়ে করেননি তাই নিজেদের সম্পর্ক আবার জোড়া লাগানো যায় কি-না তা ভেবে দেখুন।
আইনজীবী মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জাহিদ জানিয়েছেন, শুনানি শেষে ছয় বছর বয়সী শিশু ইমতিয়াজ আহমেদ বিশালকে আপাতত মায়ের কাছেই থাকার সিদ্ধান্ত দেন হাইকোর্ট। তবে, যখন খুশী তখন বাবা তার শিশু সন্তানের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন বলে আদেশ দেয়া হয়েছে। শিশুটি কার হেফাজতে থাকবে সে বিষয়ে চলমান মামলায় পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ১১ জুলাই দিন ধার্য করেছেন আদালত।
হাইকোর্টের বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে আজ শিশুর বাবার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জাহিদ। অন্যদিকে, মায়ের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।
জানা গেছে, মিরপুরের পশ্চিম শেওড়াপাড়ার ইসমাঈল আহমেদের ছেলে মোস্তফা আহমেদ রুবেলের সঙ্গে ২০১০ সালের ২৯ জুলাই বিয়ে হয় পল্লবীর মোহাম্মদ আলীর মেয়ে সুমাইয়া সুলতানার। ইসমাঈল আহমেদের মালিকানাধীন নর্থ সাউথ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষকতা করার সুবাদে সুমাইয়া সুলতানার সঙ্গে মোস্তফা আহমেদ রুবেলের পরিচয়। সেখান থেকে ভালোবাসা। এরপর পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে।
২০১২ সালের ৬ জুলাই জন্ম হয় শিশু বিশালের। কিন্তু গতবছরের ২৬ সেপ্টেম্বর বিশালকে নিয়ে তার মা সুমাইয়া সুলতানা নানার বাড়ি পল্লবীতে চলে যান। এরপর তিনি আর স্বামীর বাড়িতে ফেরেননি। মোস্তফা আহমেদ রুবেলের অভিযোগ, একপর্যায়ে সুমাইয়া তাকে তালাকনামা পাঠিয়ে দেন। এরপরও তিনি শ্বশুরবাড়িতে যেয়ে স্ত্রী, শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে কথা বলেন। নিজের ছেলেকে দেখার চেষ্টা করেন। কিন্তু ছেলেকে দেখতে দেননি তারা। এ বিষয়ে তিনি ছেলের নিরাপত্তার জন্য থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেন। পারিবারিকভাবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
এ অবস্থায় ছেলেকে স্ত্রী, শ্বশুর-শাশুড়ির কাছ থেকে উদ্ধার করে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদন করেন রুবেল। এ রিট আবেদনে হাইকোর্ট গত ২৯ মে এক আদেশে শিশু বিশালকে ২৬ জুন আদালতে হাজির করতে পল্লবী থানা পুলিশ এবং সুমাইয়া সুলতানাকে নির্দেশ দেন। সে আদেশে মঙ্গলবার নির্ধারিত দিনে বিশালকে আদালতে হাজির করা হয়।
এ কারণে মঙ্গলবার উভয় পরিবাবের সদস্যরা হাইকোর্টে উপস্থিত হন। রিট আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী শুনানি করলেও সুমাইয়ার পক্ষে কোনো আইনজীবী না থাকায় তিনি নিজেই আইনজীবী নিয়োগের জন্য সময় আবেদন করেন।
একপর্যায়ে মোস্তফা আহমেদ রুবেল ও সুমাইয়া সুলতানার বক্তব্য শোনেন আদালত। এর মধ্যেই রুবেল তার শিশু সন্তানের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ছেলের সঙ্গে কথা বলতে না পেরে আদালত কক্ষেই কাঁদতে থাকেন তিনি।
রুবেল আদালতকে জানান, তিনি সুমাইয়ার সঙ্গে সংসার করতে রাজি আছেন। তবে, সুমাইয়ার পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট কোনো জবাব না দেয়ায় আদালত আগামী ১১ জুলাই পরবর্তী আদেশের দিন ধার্য করেন।
এ সময় আদালত বলেন, সব সংসারেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ছোটখাটো ঝামেলা, মান-অভিমান হতেই পারে। কিন্তু এই শিশু সন্তানের দিকে তাকিয়ে আপনাদের সমঝোতা করা উচিত।
এফএইচ/জেডএ/বিএ