রাজীবের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ : আপিলের আদেশ আজ
দুই বাসের রেষারেষিতে হাত হারানোর পর মারা যাওয়া রাজীব হোসেনের দুই ভাইকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিআরটিসি) ও স্বজন পরিবহনের করা আপিলের আদেশ আজ মঙ্গলবার।
সোমবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদেস্যর আপিল বিভাগের বেঞ্চ এই আদেশ দেন। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।
আদালতে বাস মালিকদের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন আবদুল মতিন খসরু ও এ বি এম বায়েজীদ। তাদের সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার মুনীরুজ্জামান। অন্যদিকে, রাজীবের পরিবারের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
হাইকোর্টের দেয়া আদেশ স্থগিত চেয়ে বিআরটিসির করা আবেদনের ওপর শুনানি শেষ করার পর আদেশের জন্য আজকের দিন নির্ধারণ করেছেন আপিল বিভাগ।
গত ৮ মে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ রাজীবের দুই ভাইকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের মালিককে নির্দেশ দেন।
বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের মালিক প্রত্যেককে ২৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে এক মাস সময় বেধে দেন হাইকোর্ট। কিন্তু গত ১০ মে বিআরটিসি ২৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল আবেদন করে। পরে ১৩ মে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে আবেদনটি ১৭ মে শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন।
ওইদিন আবেদনটি শুনানির জন্য বিআরটিসির পাশাপাশি স্বজন পরিবহনের পক্ষে আইনজীবীরাও শুনানিতে অংশ নেন। এদিন শুনানি শেষে আদালত পরবর্তী শুনানির জন্য ২১ মে (সোমবার) দিন ধার্য করেন। সোমবার শুনানি শেষে আদালত আদেশের জন্য আজকের দিন নির্ধারণ করেন।
এর আগে গত ৮ মে হাইকোর্ট রাজীবের খালা জাহানারা পারভীন ও রাজীবের গ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদের ছেলে কাস্টমস কর্মকর্তা ওমর ফারুকের নামে সোনালী ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় একটি যৌথ হিসাব খোলার নির্দেশ দেন।
হাইকোর্টের ওই আদেশে দুই বাস মালিকের প্রত্যেককে ২৫ লাখ করে মোট ৫০ লাখ টাকা ওই হিসাব নম্বরে জমা দেয়ার জন্য এক মাস সময় বেধে দেয়া হয়। এছাড়া টাকা জমা দেয়ার পর ২৫ জুনের মধ্যে লিখিতভাবে জানানোর জন্য দুই বাস মালিককে নির্দেশ দেন আদালত।
আগামী ২৫ জুন এ মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। ওই দিন বাকি ৫০ লাখ টাকা দেয়ার বিষয়ে নির্দেশ আসতে পারে বলে জানান ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
উল্লেখ্য, গত ৩ এপ্রিল রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় দুই বাসের রেষারেষিতে হাত কাটা পড়ে কলেজ ছাত্র রাজীবের। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর ৪ এপ্রিল রিট আবেদন করেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
হাইকোর্ট এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের রুল জারিসহ রাজীবের চিকিৎসার খরচ দুই বাস মালিক বিআরটিসি এবং স্বজন পরিবহনকে বহনের নির্দেশ দেন। রুলে তাকে (রাজীব) ক্ষতিপূরণ হিসেবে এক কোটি টাকা দিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, সাধারণ যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিদ্যমান আইন কঠোরভাবে কার্যকর করতে কেন নির্দেশনা দেয়া হবে না এবং প্রয়োজনে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আইন সংশোধন বা নতুন করে বিধিমালা প্রণয়নের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না- তা জানতে চান হাইকোর্ট।
এ রুল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় গত ১৬ এপ্রিল দিবাগত রাত ১২টা ৪০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজীবের মৃত্যু হয়। ৬ মে বিষয়টি আদালতকে জানান আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। এরপর আদালত অন্তর্বর্তীকালীন রাজীবের দুই ভাইয়ের ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য এই আদেশ দেন।
এফএইচ/এসআর/পিআর