গুগল-ফেসবুক-ইউটিউবকে করের আওতায় আনার নির্দেশ
জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন গুগল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং ভিডিও দেখার জনপ্রিয় সাইট ইউটিউবসহ ইন্টারনেটভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে করের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলো বিগত ১০ বছরে কী পরিমাণ অর্থ আয় করেছে এবং ইন্টারনেটভিত্তিক সব ধরনের প্রতিষ্ঠান কী পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে সে বিষয়ে তদন্তের জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞ ওই কমিটিতে অর্থ মন্ত্রণালয় সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, এনবিআর চেয়ারম্যান, আইন মন্ত্রণালয় সচিব, তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সচিব, বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাকে রাখার জন্য বলা হয়েছে।
ওই তদন্ত কমিটিকে আগামী ২৫ জুনের মধ্যে ইন্টারনেটভিত্তিক সব প্রতিষ্ঠানকে করের আওতায় আনা, প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশে পরিচালনার জন্য নীতিমালা প্রস্তুত করা, প্রতিষ্ঠানগুলো কী পরিমাণ অর্থ নিচ্ছে, তা দেখার জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি এবং সেই কমিটি দিয়ে বিগত ১০ বছরে কী পরিমাণ অর্থ নেয়া হয়েছে তা নির্ধারণ করে একটি প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।
এছাড়া পরবর্তী আরও আদেশের জন্য ২৮ জুন দিন ধার্য করেছেন আদালত।
ইন্টারনেটভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কর ফাঁকি সংক্রান্ত দায়ের করা এক রিটের ওপর শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশরাফুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এসব আদেশ দেন।
আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব। তাকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার মো. কাউছার, ব্যারিস্টার মাজেদুল কাদের, ব্যারিস্টার সাজ্জাদুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট অপূর্ব কুমার বিশ্বাস। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।
‘ইন্টারনেটভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে প্রয়োজনীয় রাজস্ব আদায়ে কেন নির্দেশনা দেয়া হবে না’- তা জানতে চেয়েও রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলদেশ ব্যাংকের গভর্নর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রথম আলোর সম্পাদক এবং বাংলাদেশ নিউজ পেপারস ওনারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মতিউর রহমানসহ, গুগল, ফেসবুক, ইয়াহু এবং ইউটিউব কর্তৃপক্ষকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবিন পল্লব জাগো নিউজকে জানান, জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন গুগল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ভিডিও দেখার জনপ্রিয় সাইট ইউটিউবসহ ইন্টারনেটভিত্তিক সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব ফাঁকির বিরুদ্ধে গত ৯ এপ্রিল সোমবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি করেন সুপ্রিম কোর্টের ছয় আইনজীবী। তারা হলেন- ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাউসার, অ্যাডভোকেট আবু জাফর মো. সালেহ, অ্যাডভোকেট অপূর্ব কুমার বিশ্বাস, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ সাজ্জাদুল ইসলাম ও ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মাজেদুল কাদের।
এর আগে ৭ এপ্রিল সার্চ ইঞ্জিন গুগল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ ইন্টারনেটভিত্তিক সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব ফাঁকির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতি একটি আইনি নোটিশ পাঠান ওই ছয় আইনজীবী।
নোটিশে বলা হয়, প্রযুক্তির যুগে গুগল, ফেসবুক এখন প্রাত্যহিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা এখন সোশ্যাল মিডিয়ার প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপন দেখতে আগ্রহী। দিন দিন এর ব্যবহার বাড়ছে। বাড়ছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাও। এ সুযোগে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে দেশ থেকে কোটি কোটি ডলার নিয়ে যাচ্ছে ইন্টারনেট সংশ্লিষ্ট বিশ্বের নামিদামি প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু সরকারকে এক টাকাও রাজস্ব দিচ্ছে না। প্রতি বছর কত টাকা বিজ্ঞাপন বাবদ বিদেশে পাচার হচ্ছে, তার সঠিক কোনও হিসাব নেই সরকারের কোনও প্রতিষ্ঠানের কাছে। কারণ, বিজ্ঞাপনদাতারা তাদের অর্থ পরিশোধ করছে ক্রেডিট কার্ড ও অন্যান্য অনলাইন প্রযুক্তির মাধ্যমে।
নোটিশপ্রাপ্তদের কয়েকটি প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলা হয়েছিল। সেগুলো হলো- গুগল, ইয়াহু, অ্যামাজন, ইউটিউব, ফেসবুককে দেয়া সব বিল থেকে বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী প্রযোজ্য রাজস্ব কর কর্তনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করাসহ রাজস্ব কর আদায়ের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারির অনুরোধ করা হয়।
এছাড়া সরকারকে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে রাজস্ব ফাঁকির বিষয়টি তদন্ত করাসহ বিগত ১০ বছরে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব ওই ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে পেত সেই হিসাব করে সংশিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে তা আদায়ের ব্যবস্থা করতে বলা হয় নোটিশে। পাশাপাশি গুগল, ইয়াহু, অ্যামাজন, ইউটিউব,ফেসবুককে তাদের গত ১০ বছরের বকেয়া রাজস্ব বাংলাদেশ সরকারের কোষাগারে ফেরত পাঠানোর জন্যও নোটিশে বলা হয়।
ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, ‘যাদের নোটিশ পাঠানো হয়েছে তাদের নোটিশ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এর জবাব দিতে বলা হয়েছিল। অন্যথায় হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হবে কিন্তু তাদের নিকট থেকে কোনও জবাব না পাওয়ায় আদালতে রিট দায়ের করা হয়। রিটের শুনানির পর আদালত বিভিন্ন আদেশসহ রুল জারি করেন।
তিনি আরও বলেন, ফেসবুকসহ সব প্রতিষ্ঠানকে করের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সব প্রতিষ্ঠান থেকে কর (ভ্যাট) আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে সাত সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্দেশ বাস্তবায়ন হয়েছে কিনা সে বিষয়ে আগামী ২৫ জুনের মধ্যে একটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। এছাড়া পরবর্তী আদেশের জন্য মামলাটি ২৮ জুন দিন ধার্য করেছেন আদালত।
এছাড়াও ইন্টারনেট মাধ্যমগুলোর মাধ্যমে বিজ্ঞাপন, ডোমেইন বিক্রি এবং বিভিন্ন প্রকার লাইসেন্স বিক্রির ফিসহ যেকোনো লেনদেনের বিপরীতে যে পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করা হয় তার থেকে আদায়যোগ্য রাজস্ব সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে।
হাইকোর্টের দেয়া আদেশের কপি হাতে পাওয়ার পর গুগল, ফেসবুক, ইউটিউবসহ ইন্টারনেটভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে করের আওতায় আনার নির্দেশ দেন আদালত- বলেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির।
এফএইচ/এমএআর/পিআর
