দুর্নীতি দমনে বিচার বিভাগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, দুর্নীতি, সামাজিক বৈষম্য, বিচ্ছিন্নতা, স্বার্থপরতা, অবিশ্বাস, শঠতা, ষড়যন্ত্র ইত্যাদি বৃদ্ধির মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে অনৈক্য ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে। এসবের ফলাফল একটাই, আর তা হলো দুর্নীতি দেশ ও জাতিকে উন্নয়নের সব দিক থেকে পিছিয়ে দেয়। এক্ষেত্রে বিচার বিভাগ দুর্নীতি দমনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দুর্নীতির ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। সরকার দেশের জন্য যে উন্নয়নের রোডম্যাপ প্রণয়ন করেছে তাতে দুর্নীতি এবং দুর্নীতিবাজদের কোনো জায়গা নেই। তাই দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলার বিচারকালে বিচারকদেরকে সজাগ থাকতে হবে।
মঙ্গলবার বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে বিশেষ জজ এবং জেলা ও দায়রা জজদের জন্য আয়োজিত বিশেষ প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, বিচারকসহ বিচার কাজের সাথে সম্পর্কিত সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে মনে রাখা দরকার যে, মানুষ নিরুপায় না হলে আদালতের দ্বারস্থ হয় না। অধিকাংশ মানুষই দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে আদালতের শরণাপন্ন হয়। তাই আদালত-ই বিচারপ্রার্থী জনগণের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল। কাজেই বিচারপ্রার্থী জনগণ যাতে স্বল্প খরচে, স্বল্প সময়ে ন্যায়বিচার লাভ করতে পারেন এবং আইনি প্রক্রিয়া, বিচার ব্যবস্থার জটিলতা ও মামলার দীর্ঘসূত্রিতার কারণে মানুষের মধ্যে যাতে কোনো হতাশার সৃষ্টি না হয় সেদিকে বিচারকদেরকে সজাগ থাকতে হবে।
আনিসুল হক বলেন, অপরাধ প্রতিরোধের দায়িত্ব মূলত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর, তবে কার্যকরভাবে আইন প্রয়োগ করে বিচারের মাধ্যমে অপরাধীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করে অপরাধের প্রতিকার করা বিচারকের দায়িত্ব। আর এরূপ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা সম্ভব হলে শাস্তির ভয়ে অপরাধীদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা হ্রাস পাবে।
তিনি বলেন, বিচারপ্রার্থী জনগণের প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার মাধ্যমে নাগরিকের প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিত করা, অপরাধমুক্ত সমাজ গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করা বিচারকের দৈনন্দিন কার্যতালিকার আওতাভূক্ত। তবে বিচার করতে গিয়ে কোনোপক্ষই যাতে অবিচারের শিকার না হয় বা কোনোভাবে অহেতুক হয়রানি বা ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সে দিকটাও বিচারকদের নিরপেক্ষতার সাথে খেয়াল রাখা দরকার।
মন্ত্রী বলেন, ন্যায়বিচারের দ্বার যেন সর্বস্তরের বিচারপ্রার্থীদের জন্য সমানভাবে উন্মুক্ত থাকে এবং কেবলমাত্র বিত্তশালীদের জন্য সীমাবদ্ধ না থাকে, সেজন্য বিচারকদের সজাগ থাকতে হবে।
তিনি বলেন, বিচারকগণ মামলার প্রতিটি পর্যায়ে সততা, দক্ষতা, নিরপেক্ষতা ও আন্তরিকতার সাথে আইনানুগভাবে দায়িত্ব পালন করলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে এবং বিচার বিভাগের প্রতি সাধারণ জনগণের আস্থা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে।
বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি খোন্দকার মূসা খালেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হকও বক্তৃতা করেন।
এফএইচ/এসআর/জেআইএম