ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

‘সাতজনকে গুলি করে নদীতে ফেলে দেয় লাশ’

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১০:২৫ পিএম, ২০ মার্চ ২০১৮

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে নেত্রকোনার আটপাড়ার হেদায়েতুল্লাহ ওরফে আঞ্জু বিএসসি ও সোহরাব ফকির ওরফে সোহরাব আলী ওরফে ছোরাপ আলীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১৪ ও ১৫তম সাক্ষী জবানবন্দি পেশ করেছেন।

মঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউশনের আনা ১৪তম সাক্ষী প্রণতি রাণী সরকার এবং ১৫তম সাক্ষী বাদল চন্দ্র ঘোষও তাদের জবানবন্দি পেশ করেন। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে মামলার কার্যক্রম আগামী ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত মুলতবি করেছেন আদালত। ওইদিন মামলার পরবর্তী সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হবে।

জবানবন্দিতে ১৪তম সাক্ষী প্রণতি রাণী সরকার বলেন, ‘আসামি হেদায়েত উল্লাহ আঞ্জু ও এনায়েত উল্লাহ মঞ্জু (বর্তমানে মৃত) ও সোরহাব ফকির পাকিস্তানি আর্মিদের নিয়ে আমার ভাই মনোরঞ্জন বিশ্বাস, দুর্গা শংকর ভট্টাচার্যসহ সাতজনকে ধরে মগরা নদীর পাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের গুলি করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়। এর আগে গ্রামের ঘরবাড়িতে লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয়।’

দুই সাক্ষীর জবানবন্দি শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী তাদের জেরা করেন। জেরা শেষে পরবর্তী সাক্ষীর জন্য ১৯ এপ্রিল দিন নির্ধারণ করেন আদালত।

মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। আদালতে এদিন রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ও সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি। অন্যদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আব্দুস শুকুর খান।

১৪তম সাক্ষী জবানবন্দিতে বলেন, ‘আমার নাম প্রণতি সরকার। বয়স আনুমানিক ৫৮ বছর। গ্রাম- সুখারি, থানা- আটপাড়া, জেলা- নেত্রকোনা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বয়স ছিল আনুমানিক ১২ বছর। তখন আমি ধরমোরা রামধন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ছিলাম। ১৯৭১ সালের ভাদ্র মাসের ১৭ তারিখ বেলা আনুমানিক ১টার সময় আমি পরিবারের সবার সঙ্গে বাড়িতে ছিলাম। তখন অনেক গুলির শব্দ শুনে বাড়ির সামনে এসে দেখতে পাই, আমাদের বাড়ির সামনের ঘাটে নৌকায় করে রাজাকার আসছে।’

তিনি বলেন, ‘রাজাকার হেদায়েতুল্লাহ ওরফে আঞ্জু বিএসসি ও সোহরাব ফকির ওরফে সোহরাব আলী ওরফে ছোরাপ আলীসহ অন্যান্য রাজাকার ও পাকিস্তানিদের দেখতে পাই। এরপর আমি বাড়িতে গিয়ে যে যার মতো লুকাই। আমি দুর্গাশংকর বাড়ির পাশের জঙ্গলে লুকাই। আমার বাবা জগবন্ধু বিশ্বাস আমার ভাই নোরজ্ঞন বিশ্বাসকে নিয়ে কাছেই পুকুরপাড়ের জঙ্গলে লুকায়। আমাদের গ্রামটি ছিল হিন্দু অধ্যুষিত।’

সাক্ষী আরও বলেন, ‘আমার বর্ণিত রাজাকার ও পাকিস্তানি আর্মিরা আমাদের বাড়িসহ গ্রামের অন্যান্য বাড়িঘরে লুটপাট করে ও অগ্নিসংযোগ করে। আমি যে জায়গায় লুকিয়ে ছিলাম তার পাশেই একটি পায়ে হাঁটার রাস্তা ছিল। কিছুক্ষণ পর দেখতে পাই সেই রাস্তা দিয়ে আসামি রাজাকার হেদায়েত উল্লাহ আঞ্জু, এনায়েত উল্লাহ মঞ্জু, সোহরাব ফকির ও অন্যান্য রাজাকার আমাদের এলাকার দীনেশ চন্দ্র সরকার, তার স্ত্রী প্রফুল্ল রাণী বালা ও ছেলে শৈলেশ চন্দ্রকে আটক করে নিয়ে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘তখন প্রফুল্ল রাণী তার ছেলে ও স্বামীকে ছাড়ার কথা বললে আমার বর্ণিত রাজাকাররা তাদের হাতের অস্ত্র দিয়ে আটককৃতদের সবাইকে মারতে মারতে নিয়ে যায়। এরপর বিকেলের দিকে আমি দেখতে পাই যে, আমার বর্ণিত রাজাকাররা গ্রামের মনোররঞ্জন বিশ্বাস, দুর্গাশংকর ভট্টাচার্য, তারেশ সরকার, পলু দে, চাঁন খাঁ ও আব্দুল হামিদকে আটক করে মদন আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সন্ধ্যার দিকে লুকানো স্থান থেকে বের হয়ে বাড়িতে এসে দেখি বাড়িঘর সব পুড়ে গেছে। তখন আমরা পরিবারের সবাই ও গ্রামের অনেক হিন্দু পরিবার আমাদের পাশের নবী হোসেনের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেই।’

সাক্ষী বলেন, ‘রাত আনুমানিক ১০টার দিকে আব্দুল হামিদ ও চাঁন খাঁ ফিরে আসে। তাদের জিজ্ঞাসা করলে জানায় যে, আসামি রাজাকার হেদায়েত উল্লাহ আঞ্জু ও এনায়েত উল্লাহ মঞ্জু (বর্তমানে মৃত) ও সোরহাব ফাকিরসহ তাদের সঙ্গীয় রাজাকার ও পাকিস্তানি আর্মি আটককৃত হিন্দু সাতজনকে মগরা নদীর পাড়ে গুলি করে হত্যা করেছে। পরে তাদের লাশ নদীতে ফেলে দিয়েছে।’

‘আব্দুল হামিদ ও চাঁন খাঁ আরও বলেন, তারা মুসলমান হওয়াতে এবং লুটপাটকৃত মালামাল রাজাকার ক্যাম্পে পৌঁছে দেবে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সন্ধান দেবে- এমন শর্তে তাদের ছেড়ে দিয়েছে।’

এফএইচ/এমএআর/বিএ

আরও পড়ুন