লোহাগাড়ার ওসিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ
চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় ‘পুলিশ হেফাজতে থাকা’ এক ব্যক্তিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেওয়ার ঘটনায় নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) চারজনকে সতর্ক করে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহজাহানকে প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) চারজনকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
সোমবার দ্বিতীয় দিনের মতো হাইকোর্টে হাজির হয়ে মোবাইল কোর্টে সাজা দেয়ার ঘটনায় নিঃশত ক্ষমা প্রার্থনা ও ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর ঘটবে না বলে অঙ্গীকার করার পর হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ এবং এইউএনও ও পুলিশ কর্মকর্তাদের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আইনজীবী ফারজানা শারমিন ও আইনজীবী মকবুল আহমেদ। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।
গত ১৪ জানুয়ারি লোহাগাড়ার ইউএনও, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আলম, ওসি মো. শাহজাহান, এসআই হেলাল খান ও ওয়াসিমকে তলব করেন হাইকোর্ট। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল রোববার (২৮ জানুয়ারি) প্রথম দিন এবং আজ (সোমবার) তারা উপস্থিত হন।
রোববার হাইকোর্টের তলবে আদালত কক্ষে হাজির হন লোহাগাড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) মাহবুব আলম, স্থানীয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহজাহান এবং ওই থানার এসআই হেলাল খান ও এএসআই ওয়াসিম মিয়া। তারা আজও (সোমবার) আদালতে উপস্থিত হন।
দুই পুড়িয়া গাঁজা পাওয়ার অভিযোগে ৮ মাসের সাজাপ্রাপ্ত বেলাল উদ্দিন এ রিট আবেদন দায়ের করেন। রিটের পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ আদালতকে বলেন, ‘কিছু লোকের (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) এ ধরনের অপকর্মের কারণে মোবাইল কোর্ট পপুলারিটি (জনপ্রিয়তা) হারিয়েছে।’ এ সময় এইউএনও এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের পক্ষের আইনজীবী সম্পূরক আবেদনের জন্য সময় চাইলে আদালত আদেশের জন্য আজ (সোমবার) দিন ধার্য করেন।
এর আগে ফৌজদারি মামলায় ‘পুলিশ হেফাজতে থাকা’ ব্যক্তিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেওয়ার অভিযোগ বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে ওই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ চারজনকে তলব করেন হাইকোর্ট। লোহাগাড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) মাহবুব আলম, স্থানীয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহজাহান ও ওই থানার এসআই হেলাল খান ও এএসআই ওয়াসিম মিয়াকে রোববার (২৮ জানুয়ারি) আদালতে হাজির হতে বলা হয়।
একই সঙ্গে ওই ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেয়া সাজা সাজানো বলে কেন বাতিল ঘোষণা করা হবে না এবং যারা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা রুলে জানতে চাওয়া হয়। সেই সঙ্গে রিট আবেদনকারীকে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়। স্বরাষ্ট্রসচিব, লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ পাঁচজনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
জানা গেছে, গত বছরের ১৩ অক্টোবর রাত ৯টায় লোহাগাড়ার বেলাল নামের একজনকে আটক করা হয়। পরদিন একটি ফৌজদারি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। পুলিশের জব্দ তালিকায় দেখা যায়, ১৩ অক্টোবর রাত ৯টায় বেলালের কাছ থেকে দুই পুরিয়া গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে।
পরে ইউএনও পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত ১৪ অক্টোবর দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে দুই পুরিয়া গাঁজা উদ্ধারের ঘটনায় বেলালকে আট মাসের জেল দেন। এরপর ‘সাজানো’ ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেন মোহাম্মদ বেলাল উদ্দীন।
এফএইচ/আরএস/পিআর