৯৯ কোটি টাকা পাবেন মুন সিনেমা হলের মালিক
পুরান ঢাকার মুন সিনেমা হলের স্থানে গড়ে তোলা বর্তমান স্থাপনার মূল্য ৯৯ কোটি টাকা নির্ধারণ করে তা মূল মালিককে পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এই অর্থ তিন কিস্তিতে পরিশোধ করতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট ও এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে মুন সিনেমা হলের মালিক ইতালিয়ান মার্বেলস ওয়ার্কস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল আলমের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তৌফিক নেওয়াজ। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
আদালতের আদেশ অনুসারে, মুন সিনেমা হলের মালিককে প্রথম দুই মাসের মধ্যে ২৫ কোটি, দ্বিতীয় দুই মাসের মধ্যে ২৫ কোটি এবং ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে বাকি অর্থ পরিশোধ করতে হবে।
মুন সিনেমা হলের মালিকানা নিয়ে মামলার পর সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় দেয়া হয়েছিল। সিনেমা হলের সেই জমি ও সেখানে গড়া স্থাপনার মূল্য ৯৯ কোটি টাকার ওপরে। তাই মুক্তিযোদ্ধা ক্যালণ ট্রাস্টকে তিন কিস্তিতে এই টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়েছে।
আদালতের আদেশের পর ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেডের মালিক পক্ষের আইনজীবী তৌফীক নেওয়াজ বলেন, আদালত কর্তৃক কোনো বিষয় সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষিত হলে কোনো সময়েই তা অতীত বিবেচনায় মার্জনা পেতে পারে না। সাংবিধানিক ক্ষতিপূরণ হিসেবে তিন কিস্তিতে ওই অর্থ ইটালিয়ান মার্বেলকে পরিশোধ করতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট ও এর ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাটে এক সময়ে মুন সিনেমা হলের মালিক ছিল ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি। মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই সম্পত্তি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। পরে ওই সম্পত্তি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে ন্যস্ত করা হয়। ইটালিয়ান মার্বেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল আলম এই সম্পত্তির মালিকানা দাবি করেন।
জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ঘোষিত এক সামরিক ফরমানে সরকার কোনো সম্পত্তি পরিত্যক্ত ঘোষণা করলে তা আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না বলা হয়।
ইটালিয়ান মার্বেল ২০০০ সালে হাইকোর্টে ওই ফরমানসহ সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করেন। ২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট হাইকোর্ট রায় দেন। মোশতাক, সায়েম ও জিয়ার ক্ষমতাগ্রহণ সংবিধানপরিপন্থী ঘোষণা করা হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয় ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন। পাশাপাশি ৯০ দিনের মধ্যে ইটালিয়ান মার্বেলকে মুন সিনেমা হল ফেরত দিতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টকে নির্দেশ দেয়া হয়।
এ অবস্থায় সম্পত্তি ফিরে পেতে ২০১২ সালের ১০ জানুয়ারি ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করেন। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের ১৫ জানুয়ারি আপিল বিভাগ ওই সম্পত্তি অভিজ্ঞ ও নিরপেক্ষ এক প্রকৌশলীকে দিয়ে জমি ও স্থাপনার মূল্য নির্ধারণ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন।
অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে দিয়ে এই মূল্য নির্ধারণ করতে বলা হয়। এর ধারাবাহিকতায় এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। আজ ওই আবেদনটি নিষ্পত্তি করে আজ এই আদেশ দেয়া হয়।
এফএইচ/এমবিআর/আরআইপি