প্রধান বিচারপতি নিয়োগ চেয়ে রিট
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির পদ দীর্ঘদিন শূন্য থাকা এবং নতুন কাউকে নিয়োগ না দেয়া কেন অসাংবিধানিক হবে না, তা জানতে চেয়ে রিট আবেদন করেছেন এক আইনজীবী।
রিটে সংবিধান অনুযায়ী আইনজীবীদের মধ্য থেকে প্রধান বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি কেন নিয়োগ দেয়া হবে না এ মর্মেও নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
রিটে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, কেবিনেট সচিব, আইন সচিব, রেজিস্ট্রি জেনারেল (সুপ্রিম কোর্ট) এবং বাংলাদেশ বার কাউন্সিলকে বিবাদী করা হয়েছে। বুধবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ এই রিট দায়ের করেন। পরে তিনি জাগো নিউজকে রিটের করার তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ বলেন, ‘সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী কমপক্ষে ১০ বছরের পেশাগত অভিজ্ঞতা থাকলে তিনি প্রধান বিচারপতি বা সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন। কিন্তু ১৯৭২ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত এই ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি বা আপিল বিভাগের আইনজীবীদের মধ্য থেকে সরাসরি কোনো বিচারকপতি নিয়োগ দেয়া হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবীদের মধ্য থেকে ৮০ শতাংশের ওপরে অতিরিক্ত হিসেবে বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হলেও সরাসরি নিয়োগ দেয়া হয়নি। এভাবে নিয়োগের ফলে সংবিধানের ১৯, ২৭, ২৮, ৩১ ও ৪০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইনজীবীদের সঙ্গে বৈষম্য করা হয়েছে। এর মাধ্যমে তাদের মৌলিক অধিকার খর্ব করা হয়েছে।’
ইউনুছ আলী আকন্দ বলেন, ‘হাইকোর্ট বিভাগ থেকে আপিল বিভাগে বিচারক নিয়োগ দিতে হবে কিংবা পদোন্নতি দিয়ে আপিলে নিয়ে যেতে হবে এমন কোনোও বিধান সংবিধানে নেই। অথচ আপিল বিভাগে শতভাগ বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হচ্ছে হাইকোর্ট থেকে। তাই এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যিনি প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন, তাকে চারবার শপথ নিতে হচ্ছে। অর্থাৎ একই ব্যক্তি পরপর চারটি পদ হোল্ড করেন। অথচ সাংবিধানিক বিধান থাকার পরও আইনজীবীদের মধ্য থেকে আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। তাই এ বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে রিট করেছি।’
তিনি জানান, নোটিশে বিচারক নিয়োগে ভারতের সংবিধানের ১২৪ অনুচ্ছেদ তুলে ধরে বলা হয়েছে, ‘সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে নিয়োগ পেতে হলে হাই কোর্টের বিচারক হিসেবে কমপক্ষে পাঁচ বছর অথবা আইনজীবী হিসেবে কমপক্ষে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।’
পাকিস্তানের সংবিধানের ১৭৭ অনুচ্ছেদ তুলে ধরে বলা হয়েছে, ‘সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে নিয়োগ পেতে হলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে কমপক্ষে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।’
তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সিনেটের সম্মতি সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি যেকোনোও ব্যক্তিকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে নিয়োগ দিতে পারেন বলেও রিটে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ শুরুর আগে গত বছরের ২৪ আগস্ট শেষ অফিস করেন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা। এরপর ছুটিতে গিয়ে পদত্যাগ করেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা।
অবকাশের মধ্যেই গত ১০ সেপ্টেম্বর তিনি দুই সপ্তাহের জন্য বিদেশ সফরে গেলে তার অবর্তমানে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারক হিসেবে বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
পরে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে আগামী ৩ অক্টোবর হতে ১ নভেম্বর পর্যন্ত ৩০ দিন ছুটি মঞ্জুরের বিষয়ে সানুগ্রহ অনুমোদন প্রদান করেছেন এবং মাননীয় প্রধান বিচারপতি অসুস্থতাজনিত ছুটি ভোগকালীন সময়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের কর্মে প্রবীণ বিচারপতি বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞাকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালনের দায়িত্ব ন্যস্ত করেন।’
সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য হলে কিংবা তার অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে প্রধান বিচারপতি তার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ বলে রাষ্ট্রপতির কাছে সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মাণ হলে ক্ষেত্রমতে অন্য কোনো ব্যক্তি অনুরূপ পদে যোগদান না করা পর্যন্ত কিংবা প্রধান বিচারপতি স্বীয় কার্যভার পুনরায় গ্রহণ না করা পর্যন্ত আপিল বিভাগের অন্যান্য বিচারকের মধ্যে যিনি কর্মে প্রবীণতম তিনি ওই কার্যভার পালন করবেন।
এফএইচ/জেডএ/বিএ