লেকহেড স্কুল ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খুলে দেয়ার নির্দেশ
জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে বন্ধ করে দেয়া রাজধানীর গুলশান ও ধানন্ডির লেকহেড গ্রামার স্কুলের শাখা দুটি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খুলে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে, সরকারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টরা চাইলে যেকোনো অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করতে পারবে এবং সেক্ষেত্রে স্কুল কর্তৃপক্ষকে সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে।
এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার আখতার ইমাম ও ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।
পরে ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম সাংবাদিকদের বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় লেকহেড গ্রামার স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত থাকার কোনো প্রমাণ আদালতে দাখিল করতে পারেনি। এ কারণে আদালত লেকহেড স্কুল বন্ধের সিন্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেছেন।
এর আগে গতকাল এ বিষয়ে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য করেছিলেন আদালত।
সোমবার শুনানিতে রিটের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার আখতার ইমাম আদালতে বলেন, নিয়মানুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের আগে নোটিশ দিতে হবে। প্রতিষ্ঠানটি যদি রেজিস্ট্রেশনের কোনো শর্ত ভঙ্গ করে থাকে তাহলে আইননুযায়ী স্কুল কর্তৃপক্ষকে নোটিশ দেবে। আর এত বড় অভিযোগ লেকহেডের বিরুদ্ধে দেয়া হচ্ছে কিন্তু সে বিষয়ে আগে কোনো সত্যতা জানতে চাওয়া হয়নি। শোকজ নোটিশ না দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা বেআইনি।
তিনি বলেন, মুসলিম প্রধান এই দেশে ধর্মীয় বই রাখা, হিজাব পড়া কি অপরাধ ? ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের দেয়া তদন্ত প্রতিবেদন উল্লেখ করে বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনে কোথাও বলা হয়নি যে স্কুলের কেউ জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেখানে কোনো ধর্মীয় বই পাওয়া যায়নি। জঙ্গিবাদের অভিযোগ নেই। তাহলে কিসের ভিত্তিতে স্কুলটি বন্ধ করে দেয়া হলো?
গত ৯ নভেম্বর রাজধানীর ধানমন্ডি ও গুলশানের দুটি শাখাসহ লেকহেড গ্রামার স্কুলের সব শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। ওই দিন সকালে লেকহেড গ্রামার স্কুলের নতুন মালিক খালেদ হাসান মতিন ও ১২ জন শিক্ষার্থীর অভিভাবকের পক্ষে ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম রিট দায়ের করেন।
গত ৬ নভেম্বর ধানমন্ডি ও গুলশানের দুটি শাখাসহ লেকহেড স্কুলের সব শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। জঙ্গি কার্যক্রমে পৃষ্ঠপোষকতা, ধর্মীয় উগ্রবাদে অনুপ্রেরণা দেয়াসহ কয়েকটি অভিযোগে স্কুলটি বন্ধের নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সালমা জাহান স্বাক্ষরিত চিঠিতে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক আদেশে প্রতিষ্ঠানটির সব কার্যক্রম বন্ধ করতে ঢাকা জেলা প্রশাসককে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়। ওই আদেশে বলা হয়, এই প্রতিষ্ঠানটি সরকারের অনুমোদন নেয়নি। এর পরদিন ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট স্কুলটি সিলগালা করে দেন।
জানা গেছে, এই প্রতিষ্ঠানটির মূল উদ্যোক্তা ও পৃষ্ঠপোষক রেজোয়ান হারুন সম্প্রতি লন্ডন থেকে ঢাকায় এসে লাপাত্তা হয়ে যান। এখন পর্যন্ত তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। রেজোয়ান হারুনের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদে অর্থায়ন ও মদদের অভিযোগ রয়েছে। চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিবেদনে রেজোয়ান হারুনকে আইনের আওতায় আনার নির্দেশনা দেয়া হয়। ২০০৬ সালে ধানমন্ডির ৬/এ সড়কে প্রতিষ্ঠিত হয় লেকহেড গ্রামার স্কুল। গুলশানে এই স্কুলের আরো দুটি শাখা আছে।
এফএইচ/এআরএস/জেআইএম