পিলখানা হত্যাকাণ্ড : হাইকোর্টের রায় ২৬ নভেম্বর
পিলখানা হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আসামিদের করা আপিলের ওপর রায় ঘোষণার জন্য ২৬ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।
এ মামলার রায় ঘোষণার জন্য হাইকোর্টের বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বৃহত্তর বেঞ্চ ঠিক করা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপক্ষের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজল সাংবাদিকদের জানান, ডেথ রেফারেন্স ও আপিলগুলোর ওপর ২৬ নভেম্বর রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে; যা রোববারের কার্যতালিকায় থাকবে।
১৫২ আসামির ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও সাজার রায়ের বিরুদ্ধে করা আসামিদের আপিল-জেল আপিলের ওপর গত ১৩ এপ্রিল শুনানি শেষ করা হয়। যার ওপর আগামী ২৬ নভেম্বর রায় ঘোষণা করবেন হাইকোর্ট। অপরদিকে একই দিন ৬৯ জনকে খালাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলেরও রায় দেবেন আদালত।
২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষের পেপারবুক উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে হাইকোর্টে দেশের ইতিহাসে আসামি সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বড় এ মামলায় (হত্যা) শুনানি শুরু হয়। ৩৭০তম দিনে চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল শুনানি শেষ হয়। ওই দিন হাইাকোর্টের বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিশেষ বেঞ্চে সে দিন শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআরের সদর দফতরে পিলখানা ট্র্যাজেডিতে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান। ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। পরে মামলা দুটি নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তরিত হয়।
বিচার হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসংলগ্ন আলিয়া মাদরাসা মাঠের অস্থায়ী এজলাসে। বিচার শেষে ঢাকা মহানগর তৃতীয় বিশেষ আদালতে ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর রায় ঘোষণা করা হয়।
রায়ে বিডিআরের সাবেক ডিএডি তৌহিদসহ ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এ ছাড়া বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু (প্রয়াত) ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীসহ ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ২৭৭ জনকে খালাস দেয়া হয়। রায়ের পর ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) হাইকোর্টে আসে। রায়ের পর দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিরা ১১৯টি আপিল ও ১৩৩টি জেল আপিল করে।
এদের মধ্যে ৬৯ জনকে খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ একটি আপিল করে। গুরুত্বপূর্ণ এ মামলার শুনানির জন্য সুপ্রিম কোর্টে বিশেষ ব্যবস্থায় পেপারবুক তৈরি করা হয়। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে বিশেষ বেঞ্চ গঠন করে দেন। পরে ১৭ জানুয়ারি বেঞ্চ পুনর্গঠন করা হয়। পরদিন পেপারবুক উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি শুরু হয়।
এ মামলায় ৩৫ হাজার পৃষ্ঠার পেপারবুক পাঠ করা হয়েছে ১২৪ কার্যদিবসে। বাকি ২৪০ কার্যদিবস রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষ যুক্তি উপস্থাপন করেছেন।
এ অবস্থায় গত ফেব্রুয়ারি মাসে রাষ্ট্রপক্ষ সময় চেয়ে আবেদন করে। এরপর হাইকোর্ট ২ এপ্রিল পর্যন্ত এ মামলার শুনানি মুলতবি করেন। এ দিকে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা নিয়ে ২০০৯ সালে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রকাশিত সচিত্র (ভিডিও) প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ ধরনের বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেলের প্রতিবেদনের সিডি এ মামলার সাক্ষ্য হিসেবে বিচারিক আদালতে উপস্থাপন করা হয়। এরপর ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানিতে ওইসব ঘটনার ভিডিও সিডি হাইকোর্টে প্রদর্শন করা হয়।
এফএইচ/এএইচ/এআরএস/জেআইএম/আইআই