`বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির নিষ্পত্তি হওয়া দরকার’
নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধিমালা সংক্রান্ত গেজেট নিয়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার পর এবার সরকারের সঙ্গে বসার কথা বলেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা।
বিধিমালার গেজেট প্রকাশে রাষ্ট্রপক্ষের চার সপ্তাহের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার আদালতে এ কথা বলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞার নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ।
রোববার সকালে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম চার সপ্তাহ সময় আবেদনের কথা বলেন। এরপর বিচারপতি মো. আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলেন, আমরা টাইম (সময়) দিয়ে দেব। তবে এটা (বিধিমালা) হওয়া দরকার। বসারও দরকার। কোথায় কোথায় আপত্তি আছে দেখা দরকার। তবুও এটা হওয়া দরকার। ৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছি। আমরা বসতে চাই।
এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের জানান, আজ অধস্তন (নিম্ন) আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধিমালা সংক্রান্ত গেজেট নিয়ে শুনানির জন্য তালিকায় ছিল। শুনানিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা চার সপ্তাহ সময় মঞ্জুর করেছেন।
এর আগে গত ২০ আগস্ট প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ শুনানি শেষে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত গেজেট প্রকাশের সময় বাড়িয়েছিলেন। রোববার রাষ্ট্রপক্ষ আবারও চার সপ্তাহের সময় আবেদন করলে এ আদেশ দেন আপিল বিভাগ।
এর আগে গত ৬ আগস্ট দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে আলাপ-আলোচনার কথা বলেছিলেন সর্বোচ্চ আদালত। কিন্তু এর মধ্যে সরকার ও আদালতের মধ্যে কোনো আলাপ-আলোচনা হয়নি।
গত ৩০ জুলাই প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত (৩০ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত) দুপুর ২টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত আমি এবং আপিল বিভাগের বিচারপতিরা আপনাদের (সরকার) সময় দেব। বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধিমালা নিয়ে আর রশি টানাটানি নয়। আইনমন্ত্রীসহ সরকারের যেকোনো বিশেষজ্ঞ আসবেন, বৈঠকে বসব। আপনিও থাকবেন।’
১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেনের মামলায় (বিচার বিভাগ পৃথককরণ) ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেয়া হয়। ওই রায়ের ভিত্তিতে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল। আপিল বিভাগের এ নির্দেশনার পর গত বছরের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় একটি খসড়া শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধি প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়।
গত বছরের ২৮ আগস্ট শুনানিতে আপিল বিভাগ খসড়ার বিষয়ে বলেন, শৃঙ্খলা বিধিমালা সংক্রান্ত সরকারের খসড়াটি ছিল ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার হুবহু অনুরূপ; যা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থী।
এর পরই সুপ্রিম কোর্ট একটি খসড়া বিধিমালা করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠান। গত ১৬ জুলাই প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে এ সংক্রান্ত গেজেট শিগগিরই প্রস্তুত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন আইনমন্ত্রী। পরে ফের ২৭ জুলাই বিকেলে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে খসড়াটি হস্তান্তর করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
কিন্তু গত ৩০ জুলাই সকালে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির বেঞ্চ আইনমন্ত্রীর দেয়া খসড়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হলো। তিনি খসড়া দিয়ে গেলেন। আমি তো খুশি হয়ে গেলাম। যদিও খুলে দেখিনি। কিন্তু এটা কী!’
এরপর বৈঠক ডেকেছিলেন আপিল বিভাগ।
এফএইচ/এনএফ/আরআইপি