এমপি রানাকে বিচারিক আদালতে হাজিরের নির্দেশ
টাঙ্গাইলের আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় কারাগারে থাকা সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানাকে নির্ধারিত তারিখে (প্রতি শুনানির দিন) বিচারিক আদালতে হাজিরের নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
জামিন বিষয়ে আপিল আদালতের দেওয়া আদেশ সংশোধন চেয়ে এমপি রানার করা আবেদনের শুনানিকালে বুধবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার নেতৃত্বে তিন সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এছাড়া এমপি রানার পক্ষে করা ওই আবেদন শুনানি আগামী ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত মূলতবী করেন আদালত।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং রানার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী রোকন উদ্দিন মাহমুদ, তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান খান।
এ সংক্রান্ত মামলার তারিখে বিচারিক আদালতে রানাকে হাজির করা হয় না জানিয়ে এ বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে করা রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ দেন আপিল বিভাগ।
শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমি শুনেছি আদালতে ধার্য তারিখে তাকে (রানা) আনা হয় না। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, এ্তে তো আপনারই লজ্জা পাওয়ার কথা। রাষ্ট্র কী করে?
এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল এমপি রানাকে আদালতে ধার্য তারিখে হাজিরের নির্দেশনা চান। পরে আদালত আগামী ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত শুনানি মূলতবি করে ধার্য তারিখে রানাকে হাজিরের আদেশ দেন।
২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাতে টাঙ্গাইল শহরের কলেজপাড়া এলাকার নিজ বাসার কাছ থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহম্মেদের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর ফারুকের স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে টাঙ্গাইল সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
এ মামলায় টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের এমপি রানাসহ ১৪ জনকে আসামি করে গত ৩ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের গোয়েন্দা পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। গত ৬ এপ্রিল আসামিদের গ্রেফতারে পরোয়ানা জারি করেন টাঙ্গাইলের সিনিয়র চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন, রানার তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সহিদুর রহমান খান মুক্তি, জেলার সাবেক ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পা। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- আনিসুল ইসলাম রাজা, কবির হোসেন, সাবেক কমিশনার মাসুদ মিয়া, চান, নুরু, সানোয়ার হোসেন, দাঁতভাঙা বাবু, ফরিদ হোসেন, আবদুল হক ও সমির হোসেন।
আসামিদের মধ্যে আনিসুল ইসলাম রাজা, মোহাম্মদ আলী ও সমির হোসেন আগেই গ্রেফতার হয়ে টাঙ্গাইল কারাগারে রয়েছেন। আসামি ফরিদ হোসেন কিছুদিন আগে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। আর আসামি আবদুল হক পলাতক অবস্থায় কয়েক মাস আগে দুষ্কৃতকারীদের হাতে নিহত হন।
মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহম্মেদ হত্যা মামলায় ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন এমপি রানা। পরে বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
চলতি বছরের গত ১৩ এপ্রিল ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় এমপি রানাকে জামিন দেন হাইকোর্ট। এ সময় রানাকে কেন জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
পরে ৮ মে এমপি রানার জামিন চার মাসের জন্য স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। পাশাপাশি এ সময় পর্যন্ত শুনানি মূলতবি রাখা হয়।
এরআগে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি এমপি রানা ও তার তিন ভাইকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এফএইচ/এসআর/আরআইপি