ধর্ষণের পর দুই নারীকে হত্যা : পাঁচ আসামি রিমান্ডে
রাজধানীর ওয়ারীর কদমতলীতে পৃথক দিনে দুই নারীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার পাঁচ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার তাদের আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম আমিরুল হায়দার চৌধুরী তিনজনকে দুদিন এবং বাকি দুজনের বিরুদ্ধে তিনদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
দুদিনের রিমান্ডপ্রাপ্তরা হলেন জাকির সিকদার, মফিজ উদ্দিন সরকার ও রফিকুল ইসলাম। তিনদিনের রিমান্ডপ্রাপ্তরা হলেন জামাল খান পাটোয়ারী ও রাজিব হাওলাদার।
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে ওয়ারী বিভাগের ডিসি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, রাজধানীর ওয়ারীর কদমতলীতে পৃথক দিনে দুই নারীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় জড়িতরা পূর্বপরিচিত ছিলেন। শুধু টাকার জন্য নয়, ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতেই ওই দুই নারীকে হত্যা করা হয়।
গত ১৮ জুন দিবাগত রাতে কদমতলীর পূর্ব জুরাইন এলাকা থেকে পারুল বেগম ও ১০ জুলাই একই এলাকার শিশু কবরস্থানের কাছ থেকে ফরিদা বেগমের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ময়নাতদন্তে জানা যায়, ওই দুই নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়।
পৃথক ওই দুটি ঘটনায় গত বুধবার দিবাগত রাতে রাজধানীর শ্যামপুর, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা এবং সাভার ও নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকা থেকে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
বুধবার সংবাদ সম্মেলনে ডিসি ফরিদ উদ্দিন বলেন, জামাল ও রাজিব একে অপরের বন্ধু। রাজিব ও মৃত পারুল পূর্বে একটি কীটনাশক কোম্পানিতে চাকরি করতেন। পারুলের স্বামী লিটন গাড়িচালক। মাঝে-মধ্যে লিটন বাড়ির বাইরে থাকতেন, বিষয়টি রাজিব জানতেন। রাজিব তার বন্ধু পেশাদার চোর জামালকে সঙ্গে নিয়ে লিটনের অনুপস্থিতে তার বাসায় চুরির পরিকল্পনা করেন।
‘পরিকল্পনা অনুযায়ী রাজিব পারুলকে ফোন করে রাতে তার বাসায় বেড়াতে আসার কথা জানায় এবং বেড়াতে যায়। এসময় রাজিব ও জামাল পেয়ারা, আম, হালিম ও দুইটি কোমল পানীয়ের বোতল নিয়ে যায়। কৌশলে তারা পারুলকে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে হালিম ও কোমল পানীয় খাওয়ায়। পারুল গভীর ঘুমে ঢলে পড়লে দুজনে মিলে ধর্ষণ করেন।
একাধিকবার ধর্ষণের একপর্যায়ে পারুল কিছুটা চেতনা ফিরে পেয়ে চিৎকার করতে চাইলে জামাল গলা এবং রাজিব মুখ চেপে ধরেন। তারা পারুলের মুখ ও হাত-পা বেঁধে মৃত্যু নিশ্চিত হলে তার স্বর্ণের নাকফুল, ব্যবহৃত স্যামসাং মোবাইল ফোন ও টাকা নিয়ে পালিয়ে যান।
ফরিদা হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে ডিসি বলেন, গ্রেফতারকৃত শামীম ও সাগরের সঙ্গে একই পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন ফরিদা। স্বামী মারা যাওয়ার পর ফরিদা একা থাকা শুরু করেন। এ সুযোগে সাগর, শামীম ও তাদের বন্ধু জাকির ফরিদার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক গড়তে পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৭ জুন রাতে তারা ফরিদাকে জোর করে ধর্ষণ করেন।
এসময় ফরিদা চিৎকার শুরু করলে তারা মুখে চাকু ঢুকিয়ে দেয় এবং শ্বাসরোধ করে ফরিদাকে হত্যা করেন। পরে দরজায় তালা দিয়ে পালিয়ে যায়।
ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতার আসামিরা এসব তথ্য জানিয়েছেন বলে জানান ডিসি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।
জেএ/জেডএ/জেআইএম