ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

৩০তম রায়ের অপেক্ষা

প্রকাশিত: ০৫:৩৫ এএম, ১০ জুলাই ২০১৭

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালীন সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় জামায়াতের সাবেক এমপি (সংসদ সদস্য) আবু সালেহ মো. আব্দুল আজিজ ওরফে ঘোড়ামারা আজিজসহ ছয় আসামির রায় যেকোনো দিন ঘোষণা করা হবে মর্মে অপেক্ষমাণ রয়েছে।

অপর আসামিরা হলেন- মো. রুহুল আমিন ওরফে মঞ্জু (৬১), মো. আব্দুল লতিফ (৬১), আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলী (৫৯), মো. নাজমুল হুদা (৬০) ও মো. আব্দুর রহিম মিঞা (৬২)। এদের মধ্যে মো. আব্দুল লতিফ কারাগারে আছেন। পাঁচজন পলাতক রয়েছেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ৩০তম মামলার রায় ঘোষণা প্রসঙ্গে প্রসিকিউটর সায়েদুল হক সুমন জাগো নিউজকে বলেন, গাইবান্দার (গাইবান্দা ও সুন্দরগঞ্জ) সাবেক এমপি আব্দুল আজিজের বিরুদ্ধে দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছে। গত ৯ মে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল ৩০তম মামলায় উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন।

ওইদিন আদালতে আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম ও মো. শাহিনুর ইসলাম। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে সোমবার যুক্তিতর্ক পেশ করেন প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন ও শেখ মোশফেক কবির।

প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন সাংবাদিকদের জানান, আসামিদের বিরুদ্ধে আনা সব অপরাধের বিষয়ে প্রসিকিউশন লিখিত ও দালিলিক সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে অপরাধ প্রমাণে সক্ষম হয়েছেন। আশা করি আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে।

মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে গঠিত ট্রাইব্যুনালে এর আগে আরও ২৯টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। ট্রাইব্যুনালের এসব রায়ের বিরুদ্ধে আনা আপিল ও আপিল রায়ের রিভিউর চূড়ান্ত ছয়টি রায়ের পর জামায়াতের সাবেক আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলী এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হয়।

এছাড়া জামায়াতে নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা মৃত্যুদণ্ড থেকে কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল রাখা হয়।

ট্রাইব্যুনালে দণ্ডিত দুই আসামি জামায়াত নেতা গোলাম আযম ও বিএনপির নেতা আবদুল আলীম মৃত্যুবরণ করায় তাদের মামলা অকার্যকর ঘোষণা করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আনা আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে আরও ১৮টি মামলা। এসব মামলার আসামিরা হলেন- আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত মোবারক হোসেন, জাতীয় পার্টির নেতা সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার, জামায়াত নেতা আব্দুস সুবহান ও এটিএম আজহারুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির নেতা সাবেক এমপি পলাতক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বার, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন চুটু, বাগেরহাটের শেখ সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টার ও খান আকরাম হোসেন, পটুয়াখালীর ফোরকান মল্লিক, নেত্রকোনার আতাউর রহমান ননী ও ওবায়দুল হক তাহের, কিশোরগঞ্জের অ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন আহমেদ, হবিগঞ্জের মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া ও তার চাচাতো ভাই আব্দুর রাজ্জাক এবং জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য, পরে বিএনপি ও জাপায় অংশ নেয়া সাখাওয়াত হোসেন।

taibunal
আবু সালেহ মো. আব্দুল আজিজ ওরফে ঘোড়ামারা আজিজ

ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার পর সর্বশেষ আপিল আবেদন করা হয় মুসলিম প্রধানের মামলায়। এ বিষয়ে মামলার আইনজীবী আব্দুস সাত্তার পালোয়ান জাগো নিউজকে জানান, একই মামলায় দুই আসামির দণ্ড ঘোষণার পর সৈয়দ মুহাম্মদ পালাতক থাকায় অপর আসামি মুসলিম প্রধানের দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে আপিল করেন। পর্যায়ক্রমে এসব আপিল মামলার শুনানি ও নিষ্পত্তি হবে বলে সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে জানা যায়।

তদন্ত সংস্থা বলছে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ৯ থেকে ১৩ অক্টোবর বর্তমান গাইবান্ধা সদর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটান ঘোড়ামারা আজিজসহ ছয় আসামি।

প্রথম অভিযোগ : একাত্তরের ৯ অক্টোবর সকাল ৮টা বা সাড়ে ৮টার সময় আসামিরা পাকিস্তানের দখলদার সেনা বাহিনীর ২৫/৩০ জনকে সঙ্গে নিয়ে গাইবান্ধা জেলার সদর থানাধীন মৌজামালি বাড়ি গ্রামে হামলা চালিয়ে চারজন নিরীহ, নিরস্ত্র স্বাধীনতার পক্ষের মানুষকে আটক, নির্যাতন ও অপহরণ করে। পরে তাদের দাড়িয়াপুর ব্রিজে নিয়ে গিয়ে গনেশ চন্দ্র বর্মণের মাথার সঙ্গে হাত-পা বেঁধে নদীতে ফেলে দিয়ে হত্যা করে এবং বাকিদের ছেড়ে দেয়। আসামিরা আটককৃতদের বাড়ির মালামাল লুণ্ঠন করে।

দ্বিতীয় অভিযোগ : ওই দিন বিকাল ৪টার দিকে আসামিরা সুন্দরগঞ্জ থানার মাঠেরহাট ব্রিজ পাহারারত ছাত্রলীগের নেতা মো. বয়েজ উদ্দিনকে আটক করে মাঠেরহাটের রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করতে থাকে। পরদিন সকালে আসামিরা বয়েজকে থানা সদরের স্থাপিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে যায়। তিনদিন আটক রেখে নির্যাতনের পর ১৩ অক্টোবর বিকালে তাকে গুলি করে হত্যা করে লাশ মাটিচাপা দেয়।

তৃতীয় অভিযোগ : একাত্তরের ১০ অক্টোবর থেকে ১৩ অক্টোবর আসামিরা পাকিস্তান দখলদার সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় সুন্দরগঞ্জ থানার পাঁচটি ইউনিয়নে স্বাধীনতার পক্ষের ১৩ জন চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে আটক করে। তাদের তিনদিন ধরে নির্যাতন করার পর পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পের কাছে নদীর ধারে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করে এবং লাশ মাটিচাপা দেয়। সেখানে ওই শহীদদের স্মরণে একটি সৌধ নির্মিত হয়েছে।
ছয় আসামির সংক্ষিপ্ত পরিচয়

তদন্ত সংস্থার তথ্য অনুসারে, জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আজিজ মিয়া ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত চারদলীয় জোটের অধীনে গাইবান্ধা সুন্দরগঞ্জ- ১ আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন।

২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে দুটি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাসহ ১৩টি মামলা হয়। ২০১৩ সালে সুন্দরগঞ্জ থানায় চার পুলিশ সদস্য হত্যামামলায় অন্যতম আসামি এ আজিজ।

বাকিদের মধ্যে জামায়াতের সুন্দরগঞ্জ থানা শাখার সক্রিয় সদস্য রুহুল আমিন ওরফে মঞ্জুর (৬১) বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দুটি মামলা হয়।

মো. আব্দুল লতিফ জামায়াতে ইসলামী সক্রিয় কর্মী এবং সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পর্যায়ের নেতা। তার বিরুদ্ধে সুন্দরগঞ্জ থানায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগসহ তিনটি মামলা হয়।

আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলী মুক্তিযুদ্ধের আগে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের সক্রিয় নেতা ছিলেন। পরে জামায়াতে ইসলামীর সক্রিয় কর্মী বলে তদন্ত সংস্থার তথ্যে এসেছে।মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়।

১৯৭০ সাল থেকে জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে দুটি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা হয়। তিনি ১৯৯৫ সাল থেকে বিএনপির সক্রিয় কর্মী হলেও জামায়াতের সমর্থক করে বলে জানা যায়।

আর আব্দুর রহিম মিঞা মুক্তিযুদ্ধের সময়ে জামায়াতের কর্মী ছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন- এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। তার মানবতাবিরোধী অপরাধে দুটি মামলা হয়।

এফএইচ/এমএআর/পিআর

আরও পড়ুন