যুদ্ধাপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক আদালত চেয়ারম্যানের সন্তোষ
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচার প্রক্রিয়ার বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) চেয়ারম্যান বিচারপতি সিলভিয়া আলেজান্দ্রা ফার্নান্দেজ ডি গার্মেন্দি।
নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আইসিসির কার্যালয়ে দেশটি সফররত বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সঙ্গে বৈঠককালে বিচারপতি সিলভিয়া এ সন্তোষ প্রকাশ করেন। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
আইসিসি চেয়ারম্যান বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা জাতীয় পর্যায়ে সামগ্রিক বিচার ব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বৈঠককালে নেদারল্যান্ডসের ইন্টার গভর্নমেন্টাল অর্গানাইজেশনের ডেপুটি প্রসিকিউটর জেমস স্টুয়ার্ট উপস্থিত ছিলেন।
হেগ সফরে ছয় সদস্যের বাংলাদেশি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিচারপতি এসকে সিনহা। যুদ্ধাপরাধের বিচারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে অর্থের বিনিময়ে আন্তর্জাতিক লবিস্ট নিয়োগের বিষয়টিও অবহিত করেন আইসিসিকে।
বিচারপতি এসকে সিনহা বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্যে প্রথমে সুপ্রিম কোর্টের তিনজন বিচারককে নিয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে তাদের বিচারের সম্মুখীন করা হয়। পরবর্তীতে আরেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয় এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুততা আসে।
`কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে যুদ্ধাপরাধীরা বিভিন্নভাবে মুক্তিযুদ্ধের সময় ঘটা অপরাধের প্রমাণাদি ও নথিপত্র নষ্ট করে ফেলে। এক্ষেত্রে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ের পত্র-পত্রিকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। যদিও এসব সংবাদপত্র পাকিস্তানিদের মালিকানা এবং তাদের পছন্দসই মানুষের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এছাড়া যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য কিছু যুগোপযোগী বইও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।`
বৈঠককালে তিনি বলেন, বাংলাদেশে একটা এমন গ্রামও ছিল যেখানে ওই গ্রামের সব পুরুষকে মেরে ফেলা হয়েছিল। পরবর্তীতে গ্রামটি বিধবাদের নামে অর্থাৎ বিধবা পল্লি হিসেবে পরিচিত হয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময় ওই বিধবাদের জবানি নেওয়া হয়।
এ সময় প্রধান বিচারপতি আইসিসি প্রেসিডেন্টকে জানান, আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট ১৯৭৩ অনুসারে এবং আন্তর্জাতিক আইন রোম সনদ অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন হচ্ছে বাংলাদেশে। ২০০৮ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর বর্তমান সরকার এ বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করে।
২০১৫ সালে দায়িত্ব নেওয়া আইসিসির প্রেসিডেন্ট ফার্নান্দেজ প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বক্তব্য ও রোম সনদ বাস্তবায়নের অঙ্গীকারের প্রশংসা করেছেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়েছেন তিনি।
নেদারল্যান্ডস সফররত প্রধান বিচারপতি দেশটির সুপ্রিম কোর্টের প্রেসিডেন্ট মার্টিন ফেতেরিস, ইউএন মেকানিজম ফর ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট থিয়াডর মিরন, পার্মানেন্ট কোর্ট অব আর্বিট্রেশনের সেক্রেটারি জেনারেল হুগো এইচ সিবলিজ প্রমুখের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
এমএমএ