বিচার বিভাগে আস্থা ৯০ ভাগেরও বেশি মানুষের : আপিল বিভাগ
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা বলেছেন, এখনো বাংলাদেশের যেকোনো প্রতিষ্ঠান থেকে বিচার বিভাগ একশ’ ভাগ ভালো আছে। বিচার বিভাগের প্রতি দেশের মানুষের আস্থা ৯০ ভাগেরও বেশি।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল শুনানিতে বুধবার সকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সাত বিচারপতির বেঞ্চে মামলার শুনানি চলছে। বুধবার সকাল ৯টা ১০মিনিটের দিকে শুনানি শুরু করে ১০টা ২০মিনিট পযন্ত অ্যাটর্নি জেনারেল রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেছেন।
এখন রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ তার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন। বেলা ১১টা থেকে ৩০ মিনিট বিরতি দিয়ে সাড়ে ১১টায় আবাও শুনানি শুরু হয়।
শুনানিতে আদালতের ভাবমূর্তি বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, কোর্টে যা হচ্ছে তা নিয়ে বিচারপ্রার্থী ও জনগণের একটা গণশুনানি নেন।
তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, বর্তমানে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা ৯০ ভাগের চেয়ে বেশি। চৌকি আদালত থেকে শুরু করে উচ্চ আদালত পর্যন্ত।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আমি বাঁশখালীর চৌকি আদালতে গিয়ে দেখেছি। ওখানে যতজন বিচারপ্রার্থী আসেন, ডিসি অফিসেও এত লোক আসেন না। বাংলাদেশের যেকোনো প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বিচার বিভাগ ১০০ গুণ ভাল। আপনারা তো প্রধান বিচারপতিকে পঙ্গু করে রাখার......।
তখন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আই এম নট টোটালি হ্যাপি। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, প্রধান বিচারপতি চেয়েছেন যাদের লেখাপড়া আছে, যোগ্যতা আছে, তাদের বিচারক হিসেবে নিয়োগ দিতে। কিন্তু দেড় বছরেও নিয়োগ হয়নি। আপনারা যেটা চাচ্ছেন, আপনিও জানেন সবাই জানে।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, মার্শাল ল’তে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল করা হয়েছে। এটা সংবিধানের বড় লজ্জা। সেখানে রিলিজিয়াস (রাষ্ট্রধর্ম) বিষয়টাও আছে। জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, ওখানে কম্প্রোমাইজ করলে এখানে নয় কেন?
শুনানির এক পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সমস্ত পাণ্ডিত্য আমাদের, আপনাদের। কিন্তু ৭২’র সংবিধানে হাত দিতে পারেন না।
আপিল বিভাগ বলেন, ‘জুডিশিয়াল ইমপ্রুভমেন্ট থাকবে না? জুডিশিয়াল রিভিউ থাকবে না? উঠিয়ে দেন। সংবিধানের এ টু জেড আমরা ব্যাখ্যা করব, জনগণের অধিকার প্রশ্নে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রশ্নে।’
শুনানির এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি ইংল্যান্ডের জুডিশিয়ারি নিয়ে একটি লেখা অ্যাটর্নি জেনারেলকে পড়তে দেন। পড়া শেষে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনি যে লিখিত যুক্তি দিয়েছেন, এ লেখা অনুসারে সেটি না জেনেই ইংল্যান্ডের ব্যাপারে দিয়েছেন। পৃথিবীতে একমাত্র সভ্য দেশ ইংল্যান্ড। অলিখিত সংবিধান পালনে চুল পরিমাণ এদিক সেদিক হয়নি। বেক্সিটে হেরে প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কি চেতনা, কি মানসিকতা।’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন,‘আমি আপনার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছি। ইংল্যান্ড বিদেশিদের লুণ্ঠন করেছে। তাদের সভ্য বলতে পারেন না’।
প্রধান বিচারপতি বলেন,‘লুণ্ঠন অন্য জিনিস। আমেরিকাও লুণ্ঠন করছে।’ অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন,‘তাদের (ইংল্যান্ড) আইনের শাসন ডেভেলপ করেছে- এটা বলতে পারেন।’
প্রধান বিচারপতি বলেন,‘ইয়েস, তারা তাদের নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে পেরেছে।’ এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘অন্যদের লুণ্ঠন করে নিজের নাগরিকদের সুরক্ষা দিয়েছে।’
এফএইচ/এসআর/আরআইপি