রিভিউ খারিজ, সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ফলে সাঈদীর বিরুদ্ধে আগের রায় আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল রইল।
সোমবার সকাল ৯টা ১০ মিনিট থেকে রিভিউ শুনানি শুরু হয়ে শেষ হয় বেলা ১১টায়। শুনানি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আদালত রিভিউ ‘ডিসমিস’ বলে রায় ঘোষণা করেন। এ সময় আদালতে আড়াই শতাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্র ও আসামি উভয়পক্ষের রিভিউ শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি সুরন্দ্রে কুমার (এস কে) সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বিচারপতির বেঞ্চ এ রায় দেন। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন- বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।
সাঈদীর খালাস চেয়ে তার পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন এবং তার মৃত্যুদণ্ড চেয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানি করেন।
গত ৪ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ বেঞ্চ মামলাটি শুনানির জন্য (১৪ মে) গতকাল রোববার দিন ধার্য করেন। সে অনুযায়ী নির্ধারিত দিনে শুনানি শুরু হয়ে সোমবার বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়।
সোমবার রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করনে অ্যার্টনি জনোরলে মাহবুবে আলম। গতকাল রোববার সাঈদীর পক্ষে শুনানি করেন খন্দকার মাহবুব হোসেন।
২০১৬ সালের ১২ জানুয়ারি জামায়াতের নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনা করে মৃত্যুদণ্ডের জন্য আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ওই বছরের ১৭ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে রিভিউ করেছিলেন সাঈদী।
এর আগে আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের করা দুটি আপিল আংশিক মঞ্জুর করে বেঞ্চের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতিদের মতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়ে সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করেন আপিল বিভাগ। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাচঁ বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ বেঞ্চে এ রায় ঘোষণা করেন।
আপিলের রায়ে বলা হয়, ১০, ১৬ ও ১৯ নম্বর অভিযোগে সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ মতে ৬, ১১ ও ১৪ নম্বর অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়। একই সঙ্গে ৮ নম্বর অভিযোগের অংশবিশেষে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতে সাঈদীকে খালাস এবং এ অভিযোগের অংশবিশেষে তাকে ১২ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়। এছাড়াও সংখ্যাগরিষ্ঠ মতে ৭ নম্বর অভিযোগে তাকে ১০ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়।
এর আগে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি হত্যা, ধর্ষণ, লুট, নির্যাতন ও ধর্মান্তরসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ট্রাইব্যুনালে সাঈদীর বিরুদ্ধে গঠিত ২০টি অভিযোগের মধ্যে আটটি প্রমাণিত হয়। এর আগে ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর সাঈদীর বিচার শুরু হয়।
সাঈদীর বিরুদ্ধে ২০টি অভিযোগের চার্জ গঠন করে ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে আটটি অভিযোগ প্রমাণিত হয় এবং ১২টিতে তাকে খালাস দেয়া হয়। প্রমাণিত ৮টি অভিযোগ হচ্ছে ৬, ৭, ৮, ১০, ১১, ১৪, ১৬ ও ১৯।
৮ ও ১০নং অভিযোগে সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে ইব্রাহিম কুট্টি ও বিশাবালী হত্যার অভিযোগ। দুটি অভিযোগে সর্বোচ্চ সাজা হওয়ায় অপর ছয় অভিযোগে সাজা প্রয়োজন নেই বলে ট্রাইব্যুনাল রায়ে উল্লেখ করেন।
সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়ে আপিল বিভাগের দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায় ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর ৬১৪ পৃষ্ঠার এ রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে সংক্ষুব্ধ রিভিউর সুযোগ পেয়ে থাকেন। সে অনুযায়ী রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষ রায় রিভিউর আবেদন দাখিল করেন।
এফএইচ/আরএস/জেআইএম