আজিজসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলার রায় যেকোনো দিন
একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা ও গাইবান্ধার সাবেক সংসদ সদস্য আবু সালেহ মুহাম্মদ আব্দুল আজিজ মিয়া ওরফে ঘোড়া মারা আজিজসহ ছয় আসামির বিরুদ্ধে করা মামলায় রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছেন ট্রাইব্যুনাল।
রাষ্ট্র ও আসামি উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন।
আদালতে আজ আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম ও মো. শাহিনুর ইসলাম। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে সোমবার যুক্তিতর্ক পেশ করেন প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন ও শেখ মোশফেক কবির। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী।
মামলায় আব্দুল আজিজ ছাড়াও অন্যান্য আসামিরা হলেন, মো. রুহুল আমিন ওরফে মঞ্জু (৬১), মো. আব্দুল লতিফ (৬১), আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলী (৫৯), মো. নাজমুল হুদা (৬০) ও মো. আব্দুর রহিম মিঞা (৬২)। এদের মধ্যে মো. আব্দুল লতিফ কারাগারে আছেন, অন্যরা পলাতক।
যুক্তিতর্ক শেষে রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন সাংবাদিকদের জানান, আসামিদের বিরুদ্ধে আনা সব অপরাধের বিষয়ে প্রসিকিউশন লিখিত ও দালিলিক সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে অপরাধ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আশা করি আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে।
এর আগে গত ১৬ এপ্রিল মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউশনের আনা সাক্ষ্য গ্রহণ কার্যক্রম শেষ করার পর আর্গুমেন্টের জন্য ৮ মে দিন নির্ধারণ করেন ট্রাইব্যুনাল। নির্ধারিত দিনে আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউশন। এর ধারাবাহিকতায় আসামিপক্ষের আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম পাল্টা যুক্তিতর্কের কার্যক্রম শেষ করার পর রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন আদালত।
ছয় আসামির বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। ওই বছরের ২৩ নভেম্বর প্রসিকিউশনের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল ছয়জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। এ মামলায় মাত্র একজন আসামিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। পরে ঘোড়া মারা আজিজসহ সব আসামিকে পলাতক দেখিয়েই আদালতে মামলার বিচারকাজ শুরু হয়।
জানা গেছে, জামায়াতের কেন্দ্রীয় সদস্য আব্দুল আজিজ মিয়া ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পযর্ন্ত চারদলীয় জোটের অধীনে জামায়াত থেকে গাইবান্ধা সুন্দরগঞ্জ-১ আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল এর মধ্যে তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাসহ ১৩টি মামলা হয়। সুন্দরগঞ্জ থানা শাখার জামায়াতের সক্রিয় সদস্য রুহুল আমিন ওরফে মঞ্জুর বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে। এছাড়া উপজেলা জামায়াত নেতা আব্দুল লতিফের বিরুদ্ধে সুন্দরগঞ্জ থানায় মানবতাবিরোধী অপরাধসহ তিনটি মামলা হয়।
আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলী মুক্তিযুদ্ধের আগে ইসলামী ছাত্র সংঘের নেতা ছিলেন। পরে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়। ১৯৭০ সাল থেকে জামায়াতের কর্মকাণ্ডে জড়িত নাজমুল হুদার বিরুদ্ধেও দুটি মামলা রয়েছে। আব্দুর রহিম মিঞা মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের কর্মী ছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন, এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে।
এফএইচ/এসআর/পিআর