মানবতাবিরোধী ছয় আসামির বিচার শুরু
একাত্তরে সংঘটিত হত্যা-গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী সাত অপরাধে নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার আব্দুর রহমানসহ ৬ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন ট্রাইব্যুনাল। অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম শুরু হলো।
মামলার আসামিরা হলেন, শেখ মো. আব্দুল মজিদ ওরফে মজিদ মওলানা (৬৬), মো. আব্দুল খালেক তালুকদার (৬৭), মো. কবির খান (৭০), আব্দুর রহমান (৭০), আব্দুস সালাম বেগ (৬৮) ও নুরউদ্দিন (৭০)। তাদের মধ্যে আব্দুর রহমান কারাগারে আছেন। বাকি পাঁচজন পলাতক।
মামলার ওপেনিং স্টেটমেন্ট (সূচনা বক্তব্য) ও রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউশনের সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ১২ জুন দিন ঠিক করেছেন আদালত। বুধবার অভিযোগ গঠনের নির্ধারিত দিনে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর সদস্যরা হলেন, বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদী।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মো. মোখলেসুর রহমান বাদল ও সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নী। অপরদিকে আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম।
শুনানিতে প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল অভিযোগ গঠনের আদেশ দেয়ার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করলে আদালত বলেন, প্রসিকিউশনের দেয়া তথ্যমতে এ মামলার ছয় আসামির মধ্যে পাঁচজনই পলাতক। ট্রাইব্যুনালের আদেশে গ্রেফতার হয়েছেন মাত্র একজন। তাকে আজ (বুধবার) আদালত কক্ষে হাজির করা হয়েছে। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী অপর আসামিদের অনুপস্থিতিতেই অভিযোগ গঠন করা হচ্ছে।
এ সময় আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে আনা সাত অভিযোগ পাঠ করে শোনায়। অভিযোগ পড়ে শোনানোর পর আসামির আইনজীবীকে আদালত বলেন, ‘আপনার মক্কেলকে জিজ্ঞেস করেন তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উপস্থাপন করা হলো সেগুলো সত্যি কিনা। তিনি তাকে (নিজেকে) দোষী নাকি নির্দোষ কোনটা মনে করেন।’
আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম আসামি আব্দুর রহমানকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। পরে আদালত অভিযোগ গঠন করে প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য তারিখ নির্ধারণ করে আদেশ দেন।
প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি জাগো নিউজকে জানান, ট্রাইব্যুনালের একজন বিচারপতি ছুটিতে থাকায় কয়েক দফা চার্জ গঠনের সময় পিছিয়ে আজ নির্ধারিত দিনে মামলার অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে তাদের বিচারিক কাজ শুরুর আদেশ দেন আদালত।
আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, আটজন নিরীহ মানুষকে অপহরণের পর হত্যা, তিনটি বাড়ির মালামাল লুট, আটটি ঘরে অগ্নিসংযোগ ও একজনকে ধর্ষণের অভিযোগ।
২০১৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত একবছর এক মাস ৫ দিনে আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত সম্পন্ন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা শাহজাহান কবির। এর আগে আসামিদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের ২১ আগস্ট দুপুর একটায় রাজাকার বাহিনী নিয়ে বাড়হা গ্রামের আব্দুল খালেককে গুলি করে হত্যার পর কংস নদীর পানিতে মরদেহ ভাসিয়ে দেয়ার অভিযোগে শহীদ আব্দুল খালেকের ছোট ভাই মুক্তিযোদ্ধা আ. কাদির বাদী হয়ে ২০১৩ সালে মামলাটি দায়ের করেন।
এফএইচ/আরএস/ওআর/এমএস