ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

পিলখানা ট্র্যাজেডি : হাইকোর্টে রায় যেকোনো দিন

প্রকাশিত: ০৭:৩১ এএম, ১৩ এপ্রিল ২০১৭

 পিলখানায় হত্যা মামলায় ১৫২ আসামির ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) এবং আসামিদের দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানি শেষ হয়েছে। যেকোনো দিন রায় ঘোষণা করা হবে মর্মে (সিএভি) তা অপেক্ষমান রেখেছেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্টের বিচারপতি শওকত হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। বেঞ্চের অপর বিচারপতিরা হলেন- মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার।

আদালতে আপিল আবেদনকারী আসামিদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, এস এম শাহজাহান, এস এম মোবিন ও এম আমিনুল ইসলাম প্রমুখ। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তার সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম জাহিদ সারোয়ার কাজল।

আইনজীবী মো. আমিনুল ইসলাম পরে সাংবাদিকদের জানান, ২০১৫ সালে এ মামলার আপিল শুনানি শুরু হয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩৭০ দিনের শুনানি শেষ হয়েছে। শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান রেখেছেন আদালত।

মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তদের সাজা বাড়ানোর দাবিতে রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক তিনটি আপিল আবেদন করেছিল। আদালত ওই আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। এক হাজার ৬৩ দিন দেরি করে তিনটি আবেদন করা হয়েছে মর্মে আদালত তা নাকচ করে দেন। দেরিতে আবেদন করার যে যুক্তি তারা দেখিয়েছেন তা গ্রহণযোগ্য নয় বলেও আদালত বলেছেন।

চার শতাধিক আসামির পক্ষে আপিল আবেদনকারী আমিনুল ইসলাম আরও বলেন, এ মামলায় দীর্ঘ শুনানিতে আমাদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছি। আমার বিশ্বাস, আমরা ন্যায় বিচার পাব।

অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম সাংবাদিকের বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের শুনানি আজ শেষ হয়েছে। আমরা রাষ্ট্রপক্ষ থেকে খালাসপ্রাপ্তদের সাজা বাড়ানোর তিনটি দরখাস্ত করেছিলাম। কিন্তু দেরি হওয়ায় আদালত সেগুলো নাকচ করে দিয়েছেন। আদালত উভয়পক্ষের শুনানি শেষে রায়ের জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রেখেছেন।

আদালতে কী যুক্তি পেশ করেছেন- জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, কিছু আসামি আছে যাদের মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত ছিল কিন্তু হয়নি। আবার এমন কিছু আসামি আছে যারা কম সাজা পেয়েছেন। মামলায় এত সংখ্যক লোককে ফাঁসি দেয়া হয়েছে, তা নজিরবিহীন। আবার যাদের সাজা হয়েছে তাদের সবাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আছে কিনা- সেটি আদালত বিবেচনায় নেবেন।

তিনি আরও বলেন, এ মামলায় কতজনের ফাঁসি বহাল থাকবে সেটি বলা যাচ্ছে না। তবে পিলখানার ঘটনা ‘নৃশংস, খুবই দুঃখজনক’ উল্লেখ করে এ আইন কর্মকর্তা বলেন, পিলখানার ঘটনায় যে ৫৭ জন উচ্চমানের সেনা কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন, তাদের যেভাবে হত্যা করা হয়েছে এবং তাদের সিপাহিরা যেভাবে তাদের অফিসারদের হত্যা করেছে; পৃথিবীর কোথাও এমন নজির নেই। যে সব অফিসারদের হত্যা করা হয়েছে তারা প্রত্যেকে ছিলেন অত্যন্ত সজ্জন ও নিরপরাধ।

এক প্রশ্নের উত্তরে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আদালতের কাছে আমরা ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করেছি। নির্মম ওই ঘটনায় যারা জড়িত তারা যেন খালাস না পান, অপরাধীরা যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পান এবং ওই ঘটনায় যারা সম্পৃক্ত নন, তারা যেন দণ্ডিত না হন- এমন আবেদন করেছি।’

দেশের ইতিহাসে আসামির সংখ্যার দিক দিয়ে সবচেয়ে বড় এ মামলায় ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে শুনানি শুরু হয়।

প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদরদফতরে রক্তাক্ত বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান। ওই ঘটনার পর ৫৭টি বিদ্রোহের মামলার বিচার হয় বাহিনীর নিজস্ব আদালতে। আর হত্যাকাণ্ডের বিচার চলে বকশীবাজারে আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত মহানগর দায়রা জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাসে।

ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. আখতারুজ্জামান ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর এ হত্যা মামলার যে রায় ঘোষণা করেন, তাতে ১৫২ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।

মামলার সাড়ে ৮০০ আসামির মধ্যে ওই রায়ের দিন পর্যন্ত জীবিত ছিলেন ৮৪৬ জন। তাদের মধ্যে ১৬১ জনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

পাশাপাশি অস্ত্র লুটের দায়ে তাদের আরো ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা জারিমানা, অনাদায়ে আরো দুই বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারক।

এছাড়া ২৫৬ আসামিকে তিন থেকে ১০ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেয়া হয়। কারো কারো সাজার আদেশ হয় একাধিক ধারায়।

অপরাধে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় রায়ে ২৭৭ জনকে বেকসুর খালাস দেয় আদালত।

মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিতরা সবাই বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সদস্য ছিলেন। যাবজ্জীন কারাদণ্ডে দণ্ডিতদের মধ্যে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু ও আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীও রয়েছেন। এর মধ্যে নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু ২০১৫ সালের ৩ মে রাজশাহী কারাগারে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

ওই রায়ের এক বছরেরও বেশি সময় পর ডেথ রেফারেন্স হাই কোর্টে আসে। দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল ও জেল আপিল করে আসামিপক্ষ। এছাড়া রাষ্ট্রপক্ষও খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে ও সাজা বাড়াতে আপিল করে।

এফএইচ/জেডএ/এনএফ/পিআর

আরও পড়ুন