ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

ঐশীর মানসিক অবস্থা দেখতে চান হাইকোর্ট

প্রকাশিত: ০৮:২৮ এএম, ০৩ এপ্রিল ২০১৭

পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানকে হত্যাকারী তাদের সন্তান ঐশী রহমান মানসিকভাবে অসুস্থ কি না তা পর্যবেক্ষণের জন্য তাকে হাইকোর্টে হাজির করতে কারা মহাপরিদর্শকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ১০ এপ্রিল ঐশীকে আদালতে হাজির করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ।

পুলিশ দম্পতি মাহফুজুর রহমান হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানির নির্ধারিত দিনে সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

এ সময় আদালত জানান, তার (ঐশীর) বিরুদ্ধে মামলা চলছে সে তা জানে কি না এবং তার মানসিক অবস্থা দেখা দরকার।

পুলিশ দম্পতি হত্যা মামলায় ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর তাদের একমাত্র মেয়ে ঐশী রহমানকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন ঢাকার তিন নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। এরপর ওই বছরের ১৯ নভেম্বর মামলাটি ডেথ রেফারেন্স আকারে হাইকোর্টে আসে।

এদিকে এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানির জন্য ২৫টি যুক্তিতে সাড়ে সাতশ পৃষ্ঠার পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়।

ওই মামলার আইনজীবী মাহবুব হাসান রানা বলেন, নিম্ন আদালত যে রায় দিয়েছেন, তাতে অনেক ধরনের ত্রুটি রয়েছে। আমরা আপিল করেছি। আপিলে মূলত ঐশীর বয়সের বিষয়টাকেই গুরুত্বসহকার আদালতের কাছে তুলে ধরা হবে। আমরা বিচারিক আদালতে ঐশীর জন্মনিবন্ধন সনদ ডকুমেন্ট হিসেবে তুলে ধরেছি। সেখানে তার জন্মতারিখ ১৭ আগস্ট ১৯৯৬। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ তার জন্মতারিখ উল্লেখ করেছে ১৯৯৪ সালের ১৭ আগস্ট।

তিনি বলেন, ঐশীর ডিএনএ টেস্ট সঠিক ছিল না। কীভাবে ডিএনএ টেস্ট হয়েছে তার ডকুমেন্ট নেই। যারা ডিএনএ টেস্ট করেছেন, তাদের কাউকে মামলায় সাক্ষী করা হয়নি। আমরা বলেছি, ঐশী এখনও শিশু। রাষ্ট্রপক্ষ বলেছে প্রাপ্তবয়স্ক। আদালত বলেছেন সে কিশোরী। কিন্তু কিশোরী বলতে আইনে বয়সের কোনো সংজ্ঞা নেই।

তিনি আরও বলেন, ২১ নম্বর সাক্ষী ডা. নাহিদ মাহজাবীন মোর্শেদের সাক্ষ্য আমলে নেয়া হয়নি। মামলায় বিভিন্ন সময়ে ৪৯ সাক্ষীর মধ্যে ৩৭ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এসব বিষয় যুক্তি হিসেবে আমরা আপিল আবেদনে তুলে ধরেছি। এসব বিষয় আমলে নিয়ে আদালত বিবেচনা করলে আশা করি, আপিলে ঐশী ন্যায়বিচার ও খালাস পাবে।

পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানকে হত্যার দায়ে দুটি অভিযোগের দায়ে ওই দম্পতির একমাত্র মেয়ে ঐশী রহমানকে ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর দুবার মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দেন ঢাকার তিন নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহমেদ।

রায়ে প্রত্যেক মৃত্যুদণ্ডের সঙ্গে ২০ হাজার টাকা করে মোট ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এবং অনাদায়ে দুই বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়। তবে একটি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর অন্যটি সরাসরি বাতিল হয়ে যাবে।

এছাড়া ঐশীকে আশ্রয় দেয়ায় তার বন্ধু মিজানুর রহমানকে দুই বছরের কারাদণ্ড ও অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলার অন্য আসামি আসাদুজ্জামান জনিকে খালাস দেন আদালত।

রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্টে ঐশীর আইনজীবী আপিল আবেদন করেন। ওইদিন ৬ ডিসেম্বর ২৫টি যুক্তি দেখিয়ে ঐশী হাইকোর্টে আপিল দায়ের করে।

রাজধানীর মালিবাগের চামেলীবাগে একটি বাসায় সপরিবারে থাকতেন পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (পলিটিক্যাল শাখা) ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান। ২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট ওই বাসা থেকে স্ত্রী স্বপ্না রহমানসহ তার ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন ঐশী গৃহকর্মী সুমীকে নিয়ে রমনা থানায় আত্মসমর্পণ করে।

ওই ঘটনায় নিহত মাহফুজুর রহমানের ভাই মশিউর রহমান ওইদিনই পল্টন থানায় হত্যা মামলা করেন। ২৪ আগস্ট ঐশী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। পরে ওই জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করে সে।

২০১৫ সালের ৯ মার্চ ঐশী ও তার দুই বন্ধুর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগপত্র এবং নিহতদের বাসার শিশু গৃহকর্মী সুমীর বিরুদ্ধে শিশু আইনে পৃথক অভিযোগপত্র দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। পরে ওই বছরের ৬ মে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রথমে ঐশীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। পরে মামলাটি (নিষ্পত্তি) বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠায়।

ট্রাইব্যুনাল একই বছরের ৩০ নভেম্বর আবারও অভিযোগ গঠন করেন। যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে রায়ের দিন ধার্য করেন আদালত। ঐশী আত্মপক্ষ সমর্থনে আদালতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে।

এফএইচ/এসআর/জেডএ/জেআইএম

আরও পড়ুন