বক্তব্য প্রত্যাহারের প্রশ্নই আসে না : বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার বিষয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের প্রতিবাদে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবীর পাঠানো লিগ্যাল নোটিশের জবাব দিয়েছেন আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। প্রধান বিচারপতির বিষয়ে দেয়া বক্তব্য প্রত্যাহারের প্রশ্নই আসে না বলে নোটিশের জবাব দিয়েছেন শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের আইনজীবী।
সোমবার বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের পক্ষে আইনজীবী মুহাম্মদ মিজানুর রহমান ডাকযোগে এই নোটিশের জবাব দেন। বেসরকারি একটি টেলিভিশনের টকশোতে প্রধান বিচারপতিকে ‘রাজাকার’ বলায় গত ১৬ মার্চ আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিলেন আইনজীবী এখলাছ উদ্দিন ভুঁইয়া। নোটিশে সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করতে ৭২ ঘণ্টা সময় দেয়া হয়। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
ওই নোটিশের জবাবে বলা হয়, ‘ইহা সত্য যে আমার মক্কেল (সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক) গত ১৫ মার্চ বেসরকারি টিভি চ্যানেলের টকশো ‘রাজকাহন’ এ বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার(এসকে) সিনহা ১৯৭১ সালে কুখ্যাত শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন বলে উল্লেখ করেছিলেন।’
‘বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা নিজেই প্রকাশ্য আদালতে স্বীকার করেছেন যে, ১৯৭১ সালে তিনি শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। এটা প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নিজস্ব মতামত।’
‘২০১৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর আমার মক্কেল সাবেক বিচারপতি মানিকসহ মোট চারজন বিচারপতির সমন্বয়ে আপিল বিভাগের বেঞ্চ (যেখানে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা প্রিজাইডিং জজ ছিলেন) যখন যুদ্ধাপরাধী মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের আপিল শুনানি চলছিল তখন প্রকাশ্য এবং জনাকীর্ণ আদালতে (বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক, আইনজীবী এবং বিচার প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন) বিচারপতি এস কে সিনহা সুস্পষ্ট ও জোরালোভাবে স্বীকার করেন যে, তিনি ১৯৭১ সালে শান্তি কমিটির একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন।’
তিনি একপর্যায়ে আদালতে আরও বলেছিলেন ‘আমি নিজেও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জন্য কাজ করেছি।’ তার এরুপ স্বীকারোক্তি শুনে উপস্থিত সকলে হতবাক ও বিহব্বল হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে আদালতে চাপা গুঞ্জন শুরু হলে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বিভিন্ন অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন।’
প্রধান বিচারপতির এই আত্মস্বীকৃত বক্তব্য পরের দিন (১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪) বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। বিশেষ করে ডেইলি ঢাকা ট্রিবিউন পত্রিকায় প্রথম পৃষ্ঠায় ২য় শীর্ষ সংবাদ হিসেবে এটি প্রকাশিত হয়, যার শিরোনাম ছিলো “Justice Sinha discloses his role in 1971’’। এর কিছুদিন পর দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায় তার উপ-সম্পাদকীয়’তে লিখেন যে, বিচারপতি এস কে সিনহা শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। এ মর্মে স্বীকারোক্তির পর বাংলাদেশের কোনো আদালতে তিনি বিচারক হিসেবে থাকতে পারেন না। বিচারপতি এস কে সিনহার এই স্বীকারোক্তি বহুজন বিভিন্ন টকশোতে এবং টেবিলেও বহুবার আলোচনা করেছেন।’
নোটিশের উত্তরে দাবি করে বলা হয়, ‘যেহেতু প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা প্রকাশ্য আদালতে স্বীকার করেছেন যে, তিনি ১৯৭১ সালে শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন তাই আমার মুক্তিযোদ্ধা মক্কেলের(সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক) বক্তব্য প্রত্যাহার করার কোনরুপ প্রশ্নই উঠে না।’ এমতা্বস্থায় আপনার (আইনজীবী এখলাছ উদ্দিন ভূঁইয়া) নোটিশটি প্রত্যাহারে আপনি আইনগত বাধ্য বলেও নোটিশের উত্তরে জানানো হয়।’ বিচারপতি মানিক তার জবাবে ঢাকা ট্রিবিউনে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিও যুক্ত করে দেন।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ মার্চ রাত ১১টায় বেসরকারি টেলিভিশন ডিবিসি নিউজে নবনিতা চৌধুরীর সঞালনায় টকশো ‘রাজকাহন’ অনুষ্ঠানে ‘আপনি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ১৯৭১ সনে শান্তি কমিটির আত্মস্বীকৃত সদস্য’ স্বাধীনতাবিরোধী এবং একজন রাজাকার বলে বক্তব্য দেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। ওই টকশোতে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না, মাসুদ আহমেদ তালুকদার।
এফএইচ/ওআর/এমএস